নওশিন ইয়াসমিন –
আমাদের দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। আর এইসব ঐতিহাসিক স্থানের পেছনে রয়েছে হাজারও ইতিহাস ও অজানা কাহিনী। সেসব নিয়েই আমাদের আয়োজন। মসজিদ পরিচিতির ধারাবাহিক আয়োজনের আজকের পর্বে থাকছে আতিয়া জামে মসজিদ নিয়ে কিছু কথা।
প্রায় ৪০০ বছরের পুরনো ঐতিহাসিক আতিয়া জামে মসজিদ টাঙ্গাইল জেলের দেলদুয়ার উপজেলায় অবস্থিত। বাংলাদেশে যে সকল মুসলিম স্থাপত্যের ঐতিহ্য রয়েছে তার মধ্যে আতিয়া জামে মসজিদ একটি উল্লেখযোগ্য কীর্তি। ‘আতিয়া’ আরবি শব্দ ‘আতা’ থেকে উদ্ভূত যার অর্থ হলো ‘দান’। পঞ্চদশ শতকের দিকে এ অঞ্চলে আদম শাহ্ বাবা কাশ্মিরী নামে বিখ্যাত এক সুফি ধর্মপ্রচারক বসবাস করতেন। তিনি বাংলার সুলতান আলাউদ্দিন হুসায়েন শাহ-এর সময়ে আতিয়ার জায়গিরদার নিযুক্ত হয়েছিলেন। ঐ সময় কররানী শাসক সোলাইমান কররানীর কাছ থেকে তাঁর ধর্মীয় কাজকর্ম পরিচালনার জন্য বিশাল একটি এলাকা বা মহাল ওয়াকফ্ হিসাবে পান। শাহ্ বাবা কাশ্মিরী বৃদ্ধ বয়সে তাঁর প্রিয় ভক্ত সাঈদ খান পন্নীকে মোগল বাদশাহ জাহাঙ্গীর আতিয়া পরগণার শাসন কর্তা নিয়োগ করেন। সাঈদ খান পন্নী ১৬০৮ সালে আতিয়া মসজিদ নির্মাণ করেন।
সুলতানি ও মোগল আমলের স্থাপত্য শিল্পরীতির সমন্বয়ে মসজিদের পরিকল্পনা ও নির্মাণ কাজে নিযুক্ত ছিলেন প্রখ্যাত স্থপতি মুহাম্মদ খাঁ। নির্মাণের পর ১৮৩৭ সালে রওশন খাতুন চৌধুরাণী ও ১৯০৯ সালে আবুল আহমেদ খান গজনবী আতিয়া মসজিদের সংস্কার কাজ করেন।
পুরাতন দশ টাকার নোটের ডানদিকে এই মসজিদটির ছবি দেখা যায়। তবে আজকাল দশ টাকার পুরাতন নোটটি শুধু ব্যাংকে পাওয়া যায়। ঐতিহ্যবাহী আতিয়া জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয় মূলত লাল ইট দ্বারা। সুলতানি ও মুঘল আমলের স্থাপত্যরীতির সুস্পষ্ট নিদর্শন রয়েছে এই মসজিদের নির্মাণ শৈলীতে। আতিয়া মসজিদের দৈর্ঘ্য ১৮ মিটার এবং প্রস্থ ১২ মিটার। মসজিদটিতে ১ টি বড় এবং ৩ টি ছোট গম্বুজ রয়েছে। গম্বুজগুলো দেখে মনে হয়, বড় গম্বুজটি ইমাম এবং বাকি গম্বুজগুলো হল মুসল্লি। গম্বুজগুলোর নীচের অংশে নকশার কাজ রয়েছে এবং উপরে ছোট মিনারের মত বস্তু রয়েছে। এছাড়াও মসজিদের চারকোণায় চারটি চমৎকার নকশা করা পিলার রয়েছে। মসজিদের পূর্বদিকে ৩ টি আর উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ২ টি করে প্রবেশপথ রয়েছে। আতিয়া মসজিদটি বর্তমানে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক সংরক্ষিত রয়েছে।
আতিয়া জামে মসজিদ দেখতে যেতে হলে প্রথমে টাঙ্গাইল শহরে পৌঁছাতে হবে। ঢাকার মহাখালী বাস টার্মিনাল থেকে ঝটিকা সার্ভিস, ধলেশ্বরি সার্ভিস, নিরালা সার্ভিস, বিনিময় সার্ভিস সরাসরি টাঙ্গাইলের উদ্দেশ্যে নিয়মিত চলাচল করে। এসব বাসে যেতে ভাড়া পড়বে ১২০-১৫০ টাকা। টাঙ্গাইলের পুরাতন বাসস্ট্যান্ডে নেমে সিএনজি বা অটোরিকশা দিয়ে পাথরাইল বটতলা আসতে হবে। এক্ষেত্রে ভাড়া পড়বে জনপ্রতি ১৫-২০ টাকা। বটতলা থেকে সামান্য পথ পায়ে হেঁটে গেলেই যাওয়া যাবে আতিয়া জামে মসজিদে।