জীবনে আমরা কমবেশি সবাই বুদ্ধিমান হতে চাই। বুদ্ধিমান মানুষ দেখলে প্রশংসা করি, মুগ্ধ হই। সবার কথা জানি না, তবে আমি অনেক সময়েই ভেবেছি যে বুদ্ধিমান মানুষ বলতে আসলে কী বোঝায়? কী কী গুণাবলি থাকলে আমরা কাউকে বুদ্ধিমান মানুষ বলে দাবি করব? তো এই লেখাটা এই বিষয় নিয়েই। আপনি যদি নিজেকে সামান্য বুদ্ধিমানও মনে করে থাকেন, তাহলে হয়ত আপনার এই লেখাটা ভালো লাগবে।
লেখাটা মৌলিক না। অনেকদিন আগে Quora তে করা একটা প্রশ্নের লিংক পেয়েছিলাম – এই প্রশ্নটাই। কেমন করে চিনবো কারা অনেক বেশি বুদ্ধিমান? সেখানকার একটা উত্তর খুব ভালো লেগেছিল, তার কারণ এই জিনিসটা আমিও কখনো জানতাম না, কিন্তু এমনটাই হওয়া উচিৎ এই ধারণাটা ছিল। এত চমৎকার একটা লেখা বাংলায় অনুবাদ করার লোভ সামলানো কঠিন। উত্তরদাতার প্রতি অবিচার না করে যথাসম্ভব গুছিয়ে একটা ভাবানুবাদ দাঁড় করানোর চেষ্টা করলাম। সব ইংরেজি শব্দের কাঠখোট্টা বাংলা ব্যবহার না করে ইংরেজিকেই পারিভাষিক হিসেবে লিখেছি, আশা করি তাতে বুঝতে বরং সুবিধাই হবে। যদিও একারণে এটাকে সার্থক বঙ্গানুবাদ বলা যাবে না হয়ত। আর সাথে মাঝে মাঝে আমার নিজের কথাবার্তাও যোগ করা।
প্রথমে আসি বুদ্ধিমত্তার শ্রেণিবিভাগে। তো, বুদ্ধিমত্তাকে মোটামুটিভবে ন’টা ভিন্নরকম ভাগে ভাগ করা যায়।
১) Naturalist Intelligent (Nature Smart)
এধরণের বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ব্যক্তিরা জীবে প্রাণের অস্তিত্ব সম্পর্কে সচেতন থাকে, তাদের সাথে সংলগ্নতা অনুভব করে। পাথর-নদী, পাহাড়, মেঘ এইসবের প্রতি তাদের সংবেদনশীলতা থাকে। মূলত তারা প্রকৃতির সাথে সংযোগ অনুভব করে। এধরণের বৈশিষ্ট্য আসলে সবথেকে বেশি কাজে আসতো মানবসভ্যতার একদম শুরুর দিকে যখন মানুষ মূলত শিকার করত, খাবার সংগ্রহ করত আর কৃষিকাজ করত। আর এখনকার দিনের উদ্ভিদবিজ্ঞানী বা শেফদের ক্ষেত্রেও এটা খুব কাজের। তাছাড়া আমাদের এখনকার পৃথিবীর ভোক্তা বাণিজ্যে এই ধরণের বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার অনেক বেশি, সেটা গাড়ি, জুতা, মেকাপ যেটাই হোকনা কেন!
২) Musical Intelligence বা Musical Smart
মিউজিক্যাল ইনটেলিজেন্স হচ্ছে ধ্বনি, সুর, তাল, লয় এইসব বুঝতে পারার ক্ষমতা। এই ধরণের বুদ্ধিমত্তার জোরেই আমরা এত এত গান চিনি, শুনি, সৃষ্টি করি বা উপভোগ করি। আমাদের চারপাশে যেসমস্ত সুরকার, গীতিকার, সঙ্গীত সঞ্চালক, গায়ক, এমনকি মনোযোগী শ্রোতা রয়েছে এরা সবাই এই বুদ্ধিমত্তার অধিকারী। মজার ব্যাপার হচ্ছে, সঙ্গীত আর আবেগ-অনুভূতির সাথে একটা চমৎকার মেলবন্ধন পাওয়া যায়। এমনকি মিউজিক্যাল ইনটেলিজেন্স আর ম্যাথমেটিক্যাল ইনটেলিজেন্স এর মানুষজনের চিন্তাভাবনার পদ্ধতিও খুব কাছাকাছি। এরকম বুদ্ধিমত্তার অধিকারীরা হয়ত ছোট বয়স থেকেই গাইতে বা বাজাতে শুরু করে এবং আরা তাদের আশেপাশের নানারকম শব্দ-সুর এসবের ব্যাপারেও সজাগ থাকে যা হয়ত অন্যেরা খেয়ালও করবে না।
৩) Logical-Mathematical Intelligence বা Number/Reasoning Smart
শুনেই বোঝা যাচ্ছে এটা মূলত হিসাব করা, পরিমাণ বের করা, নতুন কোন তত্ত্ব নিয়ে ভাবা এবং তার জন্য প্রয়োজনীয় গাণিতিক হিসাব করতে পারার ক্ষমতা। এই বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষেরা বিভিন্ন বিষয়ের মধ্যে সম্পর্ক নিয়ে ভাবতে পারে, তাত্ত্বিক বা প্রতীকী জিনিস নিয়ে, বিন্যাস নিয়ে চিন্তা করতে পারে, একটা ধারাবাহিক পদ্ধতিতে চিন্তাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে এবং জানা তথ্য থেকে বিশ্লেষণধর্মী উপায়ে ভাবতে পারে। এটা সবথেকে ভালোভাবে দেখা যায় গণিতবিদ, বিজ্ঞানী আর গোয়েন্দাদের মধ্যে। এরকম বুদ্ধিমত্তার অধিকারীরা ছোটবেলা থেকেই বিভিন্ন বিন্যাস, বিভাগ আর জিনিসপত্রের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজতে পছন্দ করে। এরা গাণিতিক সমস্যা, কৌশলগত খেলা, ধাঁধা আর পরীক্ষা-নিরীক্ষার দিকে আগ্রহী হয়।
এমনিতে স্মার্টনেস বা বুদ্ধিমত্তা বলতে আমরা অনেকেই কিন্তু এক বাক্যে ঠুসঠাক অংক করে ফেলার ক্ষমতাকেই বুঝি যেটা কিনা বুদ্ধিমত্তার বিভিন্ন দিকের মধ্যে একটা ভাগ কেবল। অনেক ভালো অংক করতে জানলে তাকে বুদ্ধিমান অবশ্যই বলা যায়, কিন্তু তারমানে এই না যে অংক না জানলেই সে গাধা।
৪) Existential Intelligence
আশেপাশের সবকিছু নিয়ে সংবেদনশীলতা, মানুষের বা মহাবিশ্বের অস্তিত্বের নিগূঢ় প্রশ্ন নিয়ে ভাবা এইসবই এই বুদ্ধিমত্তার অংশ। এরা সাধারণত জীবনের মানে কী, কেন আমরা মরে যাই, কীভাবেই বা পৃথিবীতে মানুষের জন্ম হল এইসব নিয়ে ভাবতে পছন্দ করে। এরকম বুদ্ধিমত্তা তাদেরকে নানারকম অভূতপূর্ব চিন্তাভাবনা, ধারণা আর দর্শন সম্পর্কে ভাবতে শেখায় যা হয়ত বাকিদের চাইতে আলাদা।
৫) Interpersonal Intelligence বা People Smart
আমার নিজের কাছে এই গোত্রীয় মানুষেরা খুবই আকর্ষণীয়। অন্যান্য মানুষজনের সাথে খুবই চমৎকারভাবে মিশতে পারা আর তাদেরকে বুঝতে পারার ক্ষমতাই আসলে ইন্টারপারসোনাল ইনটেলিজেন্ট মানুষদের মূল বৈশিষ্ট্য। মৌখিক বা শারীরিক ভাষা বা অঙ্গভঙ্গি দিয়ে ভাব প্রকাশ, মানুষের নানারকম প্রকাশভঙ্গির পার্থক্য ধরতে পারা, অপরপক্ষের মন মেজাজ বা মানসিক অবস্থা বিচার করতে পারা আর সেই অনুযায়ী জবাব দিতে পারা বা একই সাথে একাধিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চিন্তা করতে পারার ক্ষমতা এইসমস্ত কিছু এধরণের বুদ্ধিমত্তার অধিকারী ব্যক্তির মধ্যে পাওয়া যায়। শিক্ষক, সমাজকর্মী, অভিনেতা, রাজনীতিবিদ – এদের মধ্যে এরকম বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ দেখা যায়। এধরণের মানুষজন ছোটবেলা থেকেই তাদের সঙ্গীসাথীদের মধ্যে দলনেতার ভূমিকা পালন করে, ভাবের আদান প্রদানে পারদর্শী হয় এবং অপরের অনুভূতি বা উদ্দেশ্য বুঝতে পারে।
৬) Bodily-Kinesthetic Intelligent বা Body Smart
নিজের শরীর আর তার সাথে চারপাশের সরঞ্জামাদি নিপুণভাবে ব্যবহার করতে পারার ক্ষমতা থাকে এইধরনের ব্যক্তিদের মধ্যে। একইসাথে এদের মধ্যে চমৎকার সময়জ্ঞান আর শরীর-মনকে একাগ্র করে কাজে নিপুণতা আনতে পারার ক্ষমতাও থাকে খুব সুন্দরভাবে। অ্যাথলেট, নৃত্যশিল্পী, সার্জন, হস্তশিল্পে পারদর্শী মানুষদের মধ্যে এরকম বুদ্ধিমত্তা বেশি দেখা যায়।
৭) Linguistic Intelligence বা Word Smart
আমার কাছে সবথেকে কঠিন আর দুঃসাধ্য মনে হওয়া বুদ্ধিমত্তা এটা। শব্দের মাধ্যমে চিন্তা করতে পারা আর ভাষা ব্যবহার করে চমৎকারভাবে ভাব প্রকাশ করা বা জটিল কোন বিষয় চট করে বুঝে যাওয়াই আসলে এরকম বুদ্ধিবৃত্তির লক্ষণ। এদের সাহায্যেই আমরা ভাষার নানারকম অর্থ আর বিন্যাস বুঝতে পারি, ভাষার জ্ঞান ব্যবহার করে অর্থপূর্ণ ভাবের আদান প্রদান করতে পারি। তথ্য উপাত্ত বলে যে এধরণের বুদ্ধিমত্তাই সবথেকে বেশি সংখ্যক মানুষের মধ্যে দেখা যায়, আরো বিশেষভাবে বললে কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, বক্তা এদের সবার মধ্যেই এরকম বুদ্ধিমত্তার খোঁজ পাওয়া যায়। এধরণের মানুষেরা ছোটবেলা থেকেই লিখতে, পড়তে, গল্প বলতে বা শব্দছক জাতীয় ধাঁধা মেলাতে পছন্দ করে।
৮) Intra-personal Intelligence বা Self Smart
নিজেকে, নিজের চিন্তাভাবনা আর আবেগ অনুভূতিকে বুঝতে পারার ক্ষমতা আর সেটাকে ব্যবহার করে জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে পারার ক্ষমতা হচ্ছে এধরণের বুদ্ধিমত্তার অধিকারী মানুষের সবথেকে বড় বৈশিষ্ট্য। এর মাধ্যমে মানুষ নিজেকে, নিজের মধ্যে থাকা মানবসত্বাকে যথাযথ মূল্যায়ন করতে শেখে, মানবসমাজকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারে। মনস্তত্ববিদ, আধ্যাত্মিক নেতা, দার্শনিক এদের মধ্যে এই ধরণের বুদ্ধিমত্তার প্রকাশ দেখা যায়। এরকম মানুষেরা ছোটবেলায় কিছুটা অন্তর্মুখী হতে পারে তবে আদতে তারা তাদের আবেগ-অনুভূতি নিয়ে সচেতন আর স্ব-অনুপ্রাণিত।
৯) Spatial Intelligent বা Picture Smart
ত্রিমাত্রিক ব্যবস্থায় ভাবতে পারার ক্ষমতা হচ্ছে এর অন্তর্গত। আরেকটু বিস্তারিতভাবে বললে, প্রবল কল্পনাশক্তি, জিনিসপত্র বা চারপাশের সবকিছুর আকার আকৃতি বিষয়ক যুক্তিজ্ঞান, দিকনির্দেশনা বোঝার ক্ষমতা, ছবি সম্পাদনা করতে পারা, ছবি আঁকতে পারা এই সবকিছুই এরকম বুদ্ধিমত্তার বহিঃপ্রকাশ। নাবিক, বিমানচালক, ভাস্কর, আঁকিয়ে, স্থপতি এদের মধ্যে এধরণের বুদ্ধিমত্তা বেশি থাকে। এধরণের মানুষেরা ছোট বয়সে গোলকধাঁধা, জিগস পাজল এইসব পছন্দ করে কিংবা আঁকাআকি করে বা দিবাস্বপ্ন দেখে সময় কাটাতে পছন্দ করে।
এর বাইরেও লেখক আরো একটা বিভাগ যোগ করেছেন যেটা তার মতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমার মতেও।
১০) Emotional Intelligence বা Feel Smart
এই ব্যাপারটা প্রথম সামনে আসে পিটার স্যালাভয় আর জন মেয়ার নামক দুজন গবেষকের মাধ্যমে। আর এটাকে জনপ্রিয় করেন ড্যান গোলম্যান, ১৯৯৬ সালে একই নামে তার লেখা একটি বইয়ের মাধ্যমে। তো জিনিসটা এমন যে- নিজেদের আবেগ অনুভূতিকে বুঝতে ও ইচ্ছেমতো পরিচালনা করতে পারা, একই সাথে অন্যের আবেগ অনুভুতিকেও বুঝতে পারা আর তাকে প্রভাবিত করতে পারা। মোটামুটিভাবে সহজ ভাষায় বললে, যারা এই ব্যাপারটা জানে যে আমাদের আবেগ অনুভূতি অন্যদের সাথে আমরা কেমন ব্যবহার করছি সেটাতেও ভূমিকা রাখে আবার তাদের উপর প্রভাব ও বিস্তার করতে পারে, সেটা ভালো বা মন্দ যাই হোক না কেন, আর শিখতে পারে যে কীভাবে নিজের ও অন্যের এইসব আবেগ অনুভূতিকে বশে আনতে হয়, বিশেষভাবে যখন কিনা আমরা অন্য কোন কারণে এমনিই চাপের মধ্যে আছি তারাই মূলত Feel Smart.
এইতো, মোটামুটি উপরের ভাগগুলাই বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের একটা শ্রেণিবিভাগ। এখান থেকে বুঝতে সহজ হয়ে যাওয়ার কথা যে আমাদের নিজেদের বুদ্ধিমত্তায় কোন ধরণের বুদ্ধির প্রভাব বেশি। যদি ধরে নেই কেউ এইগুলোর মধ্যে এক বা একাধিক রকমের বুদ্ধিমত্তার অধিকারী, তাহলে তার কিছু ভালো মন্দ দিক নিয়ে ভাবা যায়। নিচে বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের মধ্যে পাওয়া যায় এরকম কিছু দিক নিয়ে আলোচনা আছে তবে মনে রাখতে হবে এদের সবগুলোই একজন ব্যক্তির মধ্যে থাকাটা সম্ভব না। আপনি হয়ত বেশির ভাগের সাথেই নিজেকে মিলাতে পারবেন, তবে সব না। আবার হতে পারে কিছু কিছু জিনিস হয়ত আপনি এখনো বুঝে ওঠার সুযোগ পাননি যেটা আপনার মধ্যে সুপ্ত অবস্থায় আছে।
- আপনি একদম ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র সূক্ষ্মতম পার্থক্য ধরতে পারেন।
- আপনার পরিপূর্ণতাবাদ বা পারফেকশনিজমের টান আছে এবং আপনি কোন একটা কাজ শেষ করতে গিয়ে সেটার পেছনে তথ্য উপাত্ত, শক্তি বা সম্পদের অনেক বেশিটা খরচ করেন এবং এর কারণে শেষতক দেখা যায় হয়ত আপনি আসল কাজটা শেষ করতে গড়িমসি করেন।
- আপনার কোন বিষয় বুঝে সেটার বিপরীতে প্রতিক্রিয়া দেখাতে বেশি সময় লাগেনা। যেমন ধরেন, হঠাৎ হাত থেকে কিছু পড়ে যাওয়ার সময়ে সেটা যখন আপনি সময়মত ধরে ফেলেন তাতে হয়ত মাঝে মাঝে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যান।
- আপনার হাত আর চোখের মধ্যকার সামঞ্জস্য খুবই অসাধারণ।
- আপনি হয়ত একটা সহজ চিন্তা থেকে শত শত ডালপালায় বিস্তৃত চিন্তায় চলে যান খুব সহজেই, এবং এটা আপনাকে মানসিকভাবে ক্লান্ত করে দেয়। (বেশি বেশি চিন্তা করতে পারাটা যে খারাপ এমন কিছু না, কিন্তু হয়ত কিছু ক্ষেত্রে বেশি চিন্তা করাটা যতটা না ভালো, তার চাইতে বেশি ক্ষতিকর। চিন্তা করার দক্ষতা আর কত বেশিদিন চিন্তা করতে পারবেন সেটার মধ্যে একটা ভারসাম্য রাখা জরুরী।)
- আপনি ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ব্যক্তি না, বরং রাত জাগতেই বেশি ভালোবাসেন।
- আপনার শরীর-ঘড়ি হয়ত একটু লম্বা তাই চব্বিশ ঘন্টা সময়ের মধ্যে সবগুলো কাজ ঠিকভাবে শেষ করতে আপনার বেগ পেতে হয় আর এতে আপনার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে।
- আপনি ঘুমের মধ্যেও চিন্তা করতে পারেন, এমনকি সেইসব চিন্তা মাঝে মাঝে বাস্তবেও ব্যবহার করতে পারেন।
- আপনি খুব দ্রুত চিন্তা করতে পারেন।
- কোন একটা কথোপকথনে অপর পক্ষ এরপর কী বলতে পারে তা আপনি সহজেই অনুমান করতে পারেন।
- বিপরীত লিঙ্গের ব্যক্তির সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে আপনার বেশ কষ্ট হয়, বা হতে পারে আপনি হয়ত একেবারেই আগ্রহী না।
- আপনার ছোটবেলার সময়টা খুব একটা আনন্দদায়ক না, আপনি সম্ভব হলে সেটাকে বদলে ফেলতে চাইতেন।
- এমনিতে আপনি বেশ শান্তশিষ্ট কিন্তু হঠাৎ করে খারাপ লোকজন সামনে পড়লে আপনার মাথায় আগুণ ধরে যায়, আর আপনার এই সত্বাটাকে আপনি কিছুটা ভয়ই পান বলা যায়।
- বাচ্চা বয়সে কত কত সম্ভাবনা ছিল, কিন্তু কেন যেন পরীক্ষায় কিছুতেই ভালো হতনা। সেই বয়সে আপনি হয়ত একটু পাগলাটে, ভিন্নরকম ছিলেন, এক কোণায় বসে থাকা ধরণের। হয়ত পড়াশুনায় অন্যদের সমান গুরুত্ব দেননি, মূলত প্রতিযোগিতা ব্যাপারটায় বিরক্তি ধরে যাবার কারণে। এখন হয়ত কর্মজীবনে পিছিয়ে পড়ার পরে ভাবেন যে যদি সেই সময়ে ফিরে যেতে পারতেন তাহলে হয়ত বদলে নিতেন সবকিছুই। (ঠিক আছে, আমরা এখন জানি যে আপনি হয়ত আদতেই সবার থেকে ভালো ছিলেন। জিনিসটা হয়ত আত্মতৃপ্তি আর একঘেয়েমির কারণে ঘটে যাওয়া, যেটা কিনা বুদ্ধিমান বাচ্চাদের একটা নেতিবাচক দিক যার সাথে অহংকার আর নৈতিকতার অভাবও যোগ হয়। কিন্তু দুঃখজন হচ্ছে তখন আপনাকে এটা বুঝিয়ে বলার কেউই ছিলনা। কিন্তু এখন যখন আপনি ব্যাপারটা বুঝেছেন, তাই আপনার বাচ্চার জন্য যে জিনিসটা আপনি চাইবেন সেটা কিন্তু মেধা না, সেটা হচ্ছে পরিশ্রম করার মানসিকতা। ছোট থেকেই তার মধ্যে এরকম মানসিকতা তৈরি করার চেষ্টা করুন, বুদ্ধিমত্তা তার পরে আসবে। মনে রাখবেন, কঠোর পরিশ্রম মেধাকে হারিয়ে দেয় যখন মেধার সাথে পরিশ্রম না থাকে।
- আপনার কি স্কুল কলেজ জীবনের কথা মনে পড়ে যখন আমাদের সবকিছু বুঝে পড়তে চাওয়ার একটা প্রবণতা ছিল? সব সূত্র আর তত্ত্বের পেছনের ব্যাখ্যাটা আমাদের জানতেই হবে। যতই চেষ্টা করি, প্রশ্নের উত্তর মুখস্ত করে ফেললেও দুইটা জায়গায় এসে আমরা আটকে যেতাম, কীভাবে আর কেন? আমরা কেবল প্রশ্নের উত্তর জেনে ক্ষান্ত হতে চাইতাম না, বরং সেইসব তত্ত্ব বা সূত্রের সৃষ্টিকর্তারা যেমন করে ভাবতেন সেভাবে ভাবতে চাইতাম। তখন যেটা হত যে আমাদের মাথায় একগাদা প্রশ্ন জমে যেত, কিন্তু তাদের উত্তর দেবার মত শিক্ষক হয়ত আমাদের ছিলনা। আমাদের সহপাঠীরা হয়ত না বুঝে মুখস্ত করেই খুশি থাকতো আর আমরা নিজেদেরকে ভাবতাম অসহায় আর পিছিয়ে পড়া। আস্তে আস্তে এইসব প্রশ্ন জমতে জমতে পাহাড়সমান উচ্চতায় আমাদের সামনে এসে দাঁড়াতো। এটাও আপনার শিক্ষাজীবনে ফলাফল খারাপ হবার পেছনে একটা কারণ। সব বুঝা আর একদম নিপুণভাবে করতে চাওয়াটা আপনার জন্য একটা প্রতিকূলতা হয়ে দাঁড়িয়েছে কারণ আপনার প্রতিযোগীরা সবাই স্বাভাবিক সাধারণ মানুষ, যাদের নিজেদের জন্য বানানো অনুকূল পরিবেশে হওয়া খেলাতেই তাদের সাথে আপনাকে খেলতে হয়েছে। তারপরেও আপনি প্রতিযোগিতা ছেড়ে চলে যাননি, সেটাও কম না।
- আপনি ভাবতেন যে আপনার শিক্ষকরাও হয়ত আপনাকে অপছন্দ করেন কারণ আপনি অনেক অদ্ভুত আর কঠিন প্রশ্ন করতেন। তাই একটা সময় পরে আপনি প্রচণ্ড ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও প্রশ্ন করাই বন্ধ করে দিলেন। এতে যেটা হল যে আপনি বিরক্তিকর বাচ্চা হওয়ার তকমা গায়ে লাগিয়ে ফেললেন। আপনি অনেক বেশি জানতে চাইতেন, আর আপনি ছিলেন একজন হতাশ বাচ্চা। তবে এটাও মনে রাখতে হবে যে এই কৌতূহলই আপনাকে বাকিদের থেকে আলাদা করে।
- আপনার কল্পনার জগত মারাত্মক রকমের বিস্তৃত। অদ্ভুত সব ভয়ঙ্কর ধরণের চিন্তা আর পরিস্থিতি আপনার মাথায় নানাসময়ে ঘুরতে থাকে আর তাতে আপনি নিজেও বিরক্ত হন।
- আপনি বুঝতে পারেন যে নাটক-চলচ্চিত্র আপনার মনের ওপর বেশ ভালো প্রভাব ফেলতে পারে। অন্যদের চাইতে হয়ত একশ গুণ বেশি!
- অন্যদের কাছে কঠিন মনে হওয়া চ্যালেঞ্জ, ধাঁধা, বা কাজ আপনার কাছে তুলনামূলক সহজ মনে হয়।
- আপনার নতুন কোন কিছু শিখতে বেশি সময় লাগেনা, তবে সেসব খুব অল্পতেই আপনার একঘেয়ে লাগতে থাকে।
- আপনার স্মৃতিশক্তি বেশ ভালো। সত্যি! যদি আপনার তা মনে না হয় তাহলে আপনার কেবল আপনার মস্তিষ্কের ‘হিপোক্যাম্পাসের’ ওপর আরেকটু নিয়ন্ত্রণ দরকার।
- গানের ব্যাপারে আপনার বিশেষ ধরণের পছন্দ আছে, অনেকটা আবেগঘন বা বাদ্যযন্ত্রকেন্দ্রিক, কখনো কখনো পুরনো আবেগী গান।
- কোন কোন সময় হঠাৎ কোন একটা গান শুনতে শুনতে আপনার গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়, আপনার শিরদাড়া বেয়ে ঠাণ্ডা স্রোত বয়ে যায়, অন্যেরা হয়ত সেখানে তেমন বিশেষ কিছুই খুঁজে পায়না। বিশ্বাস করুন, আপনি অদ্ভুত কেউ না, এটা কেবল আপনার ইমোশনাল ইন্টেলিজেন্স। এটা আপনার একটা বিশেষত্ব, সহিংসতা আর ফালতু সিনেমা দেখে এটাকে অপচয় করবেন না যেন!
- চিন্তা আর আবেগের মধ্যে পার্থক্য করতে আপনার একটু কষ্ট হয়।
- ছোটবেলায় মাথার কোন একটা আঘাতকে আপনি আপনার এখনকার ব্যক্তিত্বের জন্য দায়ী করেন।
- আপনার কোন একটা বিশেষ শারীরিক বৈশিষ্ট্য আছে।
- কোন এক সময়ে আপনি খুবই স্রস্টাভক্ত ছিলেন, কিন্তু এখন হয়ত আর নেই।
- আপনার মনে হয় যেন নিয়তি সবসময় আপনার বিপরীতেই কাজ করে যাচ্ছে।
- সাধারণ মানুষজনদের সাথে যোগাযোগ বা সামাজিকতা রক্ষা করতে আপনাকে বেশ বেগ পেতে হয়।
- আপনি ছোটবেলায় কোন ধরণের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এখনো হয়ত সেটার বদলা নেবার কথা ভাবেন। যদিও ভালো করেই জানেন যে সেটা আর সম্ভব না।
- পুরনো কোন একটা বিবাদ বা নির্যাতনের কথা মনে করে মাঝে মাঝে আপনার হৃৎপিণ্ড দ্রুত চলতে থাকে, অ্যাড্রেনালিন বয়ে যায়, যেন ঘটনাটা একটু আগেই ঘটেছে। এমনকি আপনি ঘটনাস্থলের গন্ধও মনে করতে পারেন, অনেকটা অতীত ভ্রমণে চলে যাওয়ার মত। এটা মূলত আপনার অসাধারণ ‘হিপোক্যাম্পাস’ আর ‘এপিসোডিক মেমরি’। সমস্যাটা হল এটার কারণে আপনি খুব সহজেই দুঃখও পেয়ে যান। আপনাকে বুঝতে হবে যে আগে যেমনটা নরম বা অপরিণত আপনি ছিলেন, এখন আর তা নেই।
- কোন কোনদিন আপনি ঘুম ভেঙে উঠে খুবই আবেগী আর ভাবপ্রবণ হয়ে যান, হয়ত কোন কাছের মানুষের কথা ভেবে। সময়টা সাধারণত ভোরের দিকে হয়।
- অন্তর্মুখী হওয়ার সম্ভাবনা বেশ প্রবল, সেই সাথে আপনি ভাবতে থাকেন – কী ভুল করলাম আমি? সে কী ভাবলো? কেন আমি এত স্টুপিড? – এইসব। তবে আপনি যতখানি এইসব ভাবেন, অপরপক্ষ হয়ত কিয়দংশও ভাবছেনা।
- যদিও কার্যকারণ জানা যায়না তবে বিভিন্ন মানসিক রোগ, অ্যাংজাইটি ডিজঅর্ডার, তীব্র বিষণ্ণতা, ওসিডি, প্যানিক অ্যাটাক, সোশ্যাল অ্যাংজাইটি এইসব বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের মধ্যে খুবই সাধারণ ব্যাপার।
- অতীতে আপনি বিভিন্ন বিভ্রম বা ডিলিউশনে আক্রান্ত ছিলেন।
- হয়ত খাওয়ার টেবিলে বসে নানাবিধ অদ্ভুত চিন্তায় ডুবে যেতেন আর কেউ জিজ্ঞেস করলে মুখের ভঙ্গিমা লুকিয়ে কথা ঘুরিয়ে ফেলতেন।
- লেখাটা পড়া শেষ করে “Misophonia” শব্দটা একটু গুগল করে দেখবেন।
- আপনার কিছু অদ্ভুত ধরণের বদ্ধমূল ধারণা আছে যেখান থেকে আপনি বের হতে পারেন না, আর সেসব আপনার জীবনযাত্রায়ও প্রভাব ফেলছে।
- কোন এক কারণে আপনি জীবনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারছেন না। আপনি অতীতের কোন কিছু বদলাতে চান আর ভাবেন যে যদি আপনার কাছে অতীত ভ্রমণের উপায় থাকতো তাহলে হয়ত আপনি সব বদলে দিতেন।
- একটা সময় পরে আপনি আবিষ্কার করেছেন যে জাগতিক কোন সম্পদ আপনাকে অনুপ্রাণিত করতে পারছে না, কেবলমাত্র তীব্র কোন প্যাশনই আপনাকে এগিয়ে নিতে পারবে।
- আপনি প্রায়ই ভাবেন, “কেন আমার বন্ধুদের মধ্যে কেবল আমারই সবকিছুতে ভিন্নরকম মতামত থাকে?”
- আপনি হয়ত বন্ধু হারান, কিন্তু ভাবতে থাকেন যে এতে আপনার কিছুই যায় আসেনা।
- জীবনের ছোট ছোট আনন্দে আপনি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।
- আপনি ব্যায়াম করা ছেড়ে দিয়েছেন।
- আপনি একা হয়ে যাওয়ার ভয় পান, কিন্তু আবার সঙ্গ থাকলেও বিরক্ত বোধ করেন।
- কম্পিউটার গেমিং, সিনেমা, টিভি সিরিজ, অনলাইনে কেনাকাটা এইসব অতিরিক্ত পরিমাণে করে আপনি সান্ত্বনা বা মন অন্য দিকে সরানোর চেষ্টা করেন।
- বিজ্ঞাপনের যে অংশ মানুষকে কৌশলে প্রভাবিত করে আপনি সেসব খুবই ভালোভাবে বুঝতে পারেন।
- আপনি এটাও জানেন যে আপনিও চাইলে মানুষকে কৌশলে প্রভাবিত করতে পারেন কিন্তু আপনি সেটা কেবল ভালো কাজে খরচ করতে চান।
- হঠাৎ আপনার অনেকদিনের দেখা স্বপ্ন আপনার কাছে অর্থহীন মনে হতে থাকে। আপনার মনে হতে থাকে যেন আপনি ভিন্ন কোন জগতের মানুষ, অন্য কোথাও অজানা কোন জায়গায় চলে যেতে চান।
- আগে ভালোবাসতেন এমন অনেককিছুতেই আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
- পরিশ্রম করার আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন।
- আপনি একগাদা লোকের মাঝে থাকার চাইতে একা থাকা বা নিঃসঙ্গতা বেশি পছন্দ করেন।
- আপনি চান যেন আপনার একজন গুরু বা শিক্ষক থাকে, কিন্তু কাউকেই আপনার যথেষ্ট ভালো গুরু মনে হয়না। আপনার এটাও মনে হয় যে আপনার পাশে যদি আপনার থেকেও বুদ্ধিমান কেউ থাকতো!
- আপনি চুপচাপ নিজের মত থাকতে চান।
- আপনার মনে হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম দিনকে দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে।
- ভোট দেয়ার ব্যাপারে আপনি আপনার পরিবারের মধ্যে সবথেকে কম আগ্রহী ব্যক্তি।
- আপনার রসবোধ ছোটবেলা থেকেই বেশ অতিমাত্রার।
- ঘন ঘন আপনার মন মেজাজ পালটে যায়।
- আশাবাদী হওয়ার চাইতে আপনার নৈরাশ্যবাদী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
- কোন একটা কাজের শুরুতেই আপনি সম্ভাব্য যা কিছু খারাপ হতে পারে সেটা বুঝতে পারেন, তাই অন্যদের কাছে আপনি হয় আধ্যাত্মিক নয়ত ভীতু।
- আপনার ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় বেশ সচল।
- অতীতের কোন খারাপ ঘটনার ফলাফল হিসেবে আপনার মানুষকে বিশ্বাস করার প্রবণতা কম। এটাকে বলা হয় “Pistanthrophobia”.
- আপনার দলগত কাজ ভাল লাগেনা।
- দুনিয়ায় যত খারাপ জিনিস হচ্ছে সেইসব আপনার মাথায় এতই ঘুরপাক খায় যে আপনি হয়ত অন্যেরা যে আনন্দ করছে তাতে পুরোপুরি অংশ নিতে পারেন না।
- আপনার ভালোবাসার বা কাছের মানুষের সংখ্যা ক্রমশ কমে আসছে।
- আপনার ধারণা আমরা সবাই কোন একটা মিথ্যা জগতে বাস করছি।
- মাঝে মাঝে আপনার মনেহয় মানুষকে ভালো না বেসে আপনার হয়ত পশুপাখি নিয়েই থাকা উচিৎ।
- মাঝে মাঝে আপনি ভাবেন যে আপনি হয়ত গাধা বা স্টুপিড গোত্রীয় কেউ হলেই ভালো হত, হাসিখুশি থাকতে পারতেন, বেশি জেনেই বিপদ হয়ে গেছে।
- আপনার মনে হয় কোন কোন জড় বস্তুর প্রাণ আছে, আত্মা আছে।
- জীবনের অর্থ দিনে দিনে আপনার কাছে ঝাপসা হয়ে আসছে। এটা আসলে আপনার এক্সিসটেনশিয়াল ইনটেলিজেন্সের বিকাশ।
- মহাবিশ্বে আপনার নিজের অস্তিত্ব নিয়েই আপনি প্রশ্ন করে যাচ্ছেন প্রতিনিয়ত।
- মাঝে মাঝে আপনার কৌতূহল আপনাকে পাগল করে দেয়, এমনকি আপনার পরিবার পরিজনেরাও এটা জানে।
আমার মনেহয় এ পর্যন্ত আসতে আসতে আপনি অনেকখানি নিজেকে বুঝতে পারছেন। সামনেও আসলে আরো কিছু কথা বাকি আছে। সেগুলো জটিল হলেও বেশ মজার।
- দিন দিন যত আপনি প্রাপ্তবয়স্ক হচ্ছেন ততই আপনি বুঝতে পারছেন যে জাগতিক কোনকিছুই আপনাকে আর টানেনা। টাকাপয়সা, আপনার খুব পছন্দের গাড়ি, এমনকি আপনার কোন স্বপ্ন। কারণ আপনার মনে হয় এগুলো সবই নিষ্প্রাণ কল্পনা, যেগুলো কিনা আপনার চাইতে বুদ্ধিমত্তায় খাটো মানুষদের তৈরি করা যেন বাকিরা এসবকেই জীবনের সবকিছু মনে করে।
- আপনার জীবন যতই আগাতে থাকে আপনি ততই বুঝতে পারেন যে আপনি অন্যদের চাইতে ভিন্ন, তাই আপনি বাকিদের থেকে নিজেকে আলাদা করে ফেলেন। সাধারণ মানুষজন আপনার উচ্চমার্গীয় চিন্তা বা দর্শনগুলো দেখতে বা বুঝতে পারেনা, এবং সে কারণে আপনিও হতাশ হয়ে যান আর তাদের সমাজ থেকে বাইরে চলে যান।
- সাধারণ মানুষের মাথায় কী চলছে, কীভাবে তারা ভাবছে, কেন তারা এইভাবেই প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে সবকিছুই আপনি পানির মত পরিষ্কার দেখতে পান। কিন্তু বিপরীতভাবে এটা হয় না – আপনার চিন্তাভাবনা তারা ধরতে পারেনা। এতে করে আপনার আর বাকিদের মধ্যে একটা বিভেদ থেকে যায় সবসময়েই। কিছু বিখ্যাত বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের সাথেও কিন্তু এমনটাই হয়েছে, যেমন নিকোলা টেসলা, অ্যালবার্ট আইনস্টাইন প্রমুখ, আর তাদের মতবাদগুলোও সাধারণ সমাজে প্রথমে বাতিল হিসেবেই ছিল কারণ এইসমস্ত বুদ্ধিমান ব্যক্তিদের কথা বোঝার মত বুদ্ধিমত্তা বাকিদের ছিলনা। এখন আমরা জানি তাঁরা কতখানি অসাধারণ ছিলেন!
- মানুষের তৈরি সব প্রক্রিয়া, প্রতিষ্ঠান কীভাবে কাজ করে আপনি সবই বুঝতে পারেন, কীভাবে কৌশলে অন্যদের প্রভাবিত করা হচ্ছে সেসবও আপনি বুঝতে পারেন। তাই আপনি এইসব আধাজ্ঞানী সাধারণ মানুষ, এমনকি সরকারেরও বিপক্ষে চলে যান।
- এমন সম্ভাবনাও থাকে যে, আপনি যদি ইমোশনালি বুদ্ধিমান হন, আধ্যাত্মিক, দার্শনিক আর নীতিবান হন, ন্যায় এবং সমতায় বিশ্বাস করেন এবং এই ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন যে মানুষ স্বার্থসিদ্ধির জন্য অনেক ধরণের অনৈতিক কাজেই জড়িয়েছে তাহলে হয়ত আপনি ‘Misanthrope’ হয়ে যাবেন, মানে যে কি না মানবসভ্যতাকে ঘৃণা করে।
- আর যদি আপনি বুদ্ধিমত্তা দিয়ে বিচার করে ‘Misanthrope’ হয়েই যান, তাহলে দেখতে পাবেন যে যতই চেষ্টা করিনা কেন, যেই নিখুঁত বিশ্বের আমরা স্বপ্ন দেখি সেটা আপনার চারপাশে থাকা মানুষের উপস্থিতিতে কখনোই সম্ভব না। এই মানব সভ্যতা হয়ত এমনটাই হবার ছিল, এর সংস্কারসাধন অসাধ্য!
- “জীবন সুন্দর” – এধরণের জনপ্রিয় মতবাদ হয়ত আপনার মাঝে মাঝে ভালো লাগে কারণ আপনি আধ্যাত্মিক, কিন্তু আবার আপনি নিরপেক্ষও। তাই আপনি হয়ত এই জগতের নিয়মকানুনকে ঘৃণা করবেন। আপনার মনে হয় যে এইসব অন্যায় আর অবিচারের বদলে কিছুই না থাক, এই বরং ভালো হত।
বলতে বলতে অনেক কিছুই হয়ে গেল। এইসব বৈশিষ্ট্যের বেশিরভাগই অদ্ভুত, ভিন্নরকম, কোন কোনটা হয়ত মানসিক রোগ বলেও চালিয়ে দেয়া যায়। কিন্তু কেউ কেউ হয়ত উপরের বেশিরভাগ জিনিসের সাথেই বেশ ভালোভাবে নিজেকে মিলাতে পারছেন। উপরে দেয়া নেতিবাচক বৈশিষ্ট্যগুলোর মধ্যেও একটা সম্পর্ক আছে, যদিও কারণটা এখনো কেউ জানেনা।
আমরা জানি যে সব বুদ্ধিমান মানুষই কিন্তু সুখী বা সফল না। বরং পৃথিবীর ইতিহাসে এমন অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি আছেন যারা কিনা তাদের বুদ্ধিমত্তার জোরে আমাদের জীবন বদলে দিয়েছেন চিরতরে কিন্তু আদতে তাদের নিজেদের জীবন ছিল খুবই অসন্তোষজনক বা দুঃখী। আবার একইসাথে সুখে-আনন্দে থাকা অনেক বুদ্ধিমান মানুষের উদাহরণও কিন্তু বিদ্যমান।
আশা করি বুদ্ধিমত্তা নিয়ে বিদ্যমান চিন্তায় কিছু যোগ করা গেছে। এই লেখাটা যেই Quora-উত্তর থেকে অনুবাদ-মতন করে লেখা সেটার লেখক ‘Grizzly Thiyam’. আসল লেখাটাও পড়ে দেখতে পারেন, খুবই চমৎকার এবং সুখপাঠ্য।
তো এখন আপনার কাছে প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি কি বুদ্ধিমান? আর আপনার দেখা সবথেকে বুদ্ধিমান ব্যক্তি কে বা কারা? তাদের বুদ্ধিমত্তা কোন প্রজাতির?
শারমিন শহীদ তিষা একজন পুরকৌশলী এবং বর্তমানে বুয়েটের এক্সিডেন্ট রিসার্চ ইন্সটিটিউটে জুনিয়র ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত