back to top
14.9 C
New York
Sunday, October 6, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

গণিতের যত পদক

আমরা প্রায়শই নোবেল পদকের কথা শুনে থাকি যা পদার্থ, রসায়ন, সাহিত্য, বিশ্ব-শান্তি, চিকিৎসা এবং অর্থনীতিতে দেওয়া হয়ে থাকে। কিন্তু মানবজীবনে বহুল ব্যবহৃত গণিতের জন্য যে পদক বা পুরস্কারগুলো দেয়া হয় তার ব্যাপারে কতটুকুই বা জানি আমরা। আজকে আমরা গণিতের এই নামিদামি পদকগুলোর ব্যাপারেই জানবো। 

ফিল্ডস (Fields) পদকঃ 

 

গণিতের পদক নিয়ে কথা বলতে গেলে প্রথমেই যেই পদকের নাম চলে আসে তা হলো ফিল্ডস পদক। একে অনেকে “গণিতের নোবেল” বলে থাকেন। কানাডীয় গণিতবিদ জন চার্লস ফিল্ডসের নামে এই পুরস্কারটির নামকরণ করা হয়েছে। আন্তর্জাতিক গণিত সংঘের মহাসভাতে প্রতি চার বছর পর পর দুই থেকে চারজন অনূর্ধ্ব চল্লিশ বছর বয়স্ক তরুণ গণিতবিদদের গণিতশাস্ত্রে অসাধারণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেওয়া হয়ে থাকে। ১৯৩৬ সাল থেকে শুরু হয়ে ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৬৪ জনকে এই পুরস্কারে সম্মানিত করা হয়েছে যাদের মধ্যে ২ জন নারী গণিতবিদও রয়েছেন। পুরস্কার হিসেবে বিজয়ীদের সোনার পদক এবং ১৫ হাজার কানাডীয় ডলার দেওয়া হয়ে থাকে। ২০২২ সালে মোট ৪ জন এই পদক পেয়েছেন – আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক জুন হু, ফ্রান্সের ইন্সটিটিউট অফ অ্যাডভান্সড সায়েন্টিফিক স্টাডিজের অধ্যাপক হুগো ডুমিনিল-কপিন, ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের অধ্যাপক জেমস মেনার্ড, আর সুইজারল্যান্ডের ফেডারেল ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজি ইন লাউস্যানের অধ্যাপক মারিনা ভিয়াযভস্কি। 


ছবি ১: ফিল্ডস পদক

আবেল (Abel) পুরস্কারঃ

 

ফিল্ডস পদকের পাশাপাশি আবেল পুরস্কারও বিশ্বব্যাপী “গণিতের নোবেল” নামে সুপরিচিত। ২০০১ সাল থেকে নরওয়ে সরকার প্রতিবছর এক বা একাধিক গণিতবিদকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। পুরস্কারটি বিখ্যাত নরওয়েজীয় গণিতজ্ঞ নিল্‌স হেনরিক আবেলের নামে নামকরণ করা হয়েছে। আবেল পুরস্কার বিজয়ীকে ৭৫ লক্ষ নরওয়েজীয় ক্রোন (সাড়ে ৭ লক্ষ আমেরিকান ডলারের সমমানের) দেয়া হয়। ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২৫ জন গণিতবিদ এই মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কারটি পেয়েছেন। আমেরিকান স্টোনি ব্রুক ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ডেনিস পারনেল সুল্লিভান ২০২২ সালে আবেল পুরস্কারে ভূষিত হন। 

ছবি ২: আবেল পদক

উল্ফ (Wolf) পুরস্কারঃ

ইসরায়েল এর উল্ফ ফাউন্ডেশন প্রদত্ত ছয়টি পুরস্কারের একটি দেওয়া হয় গণিতক্ষেত্রে অনবদ্য অবদানের জন্য। ১৯৭৮ সাল থেকে চালু হওয়া এই পুরস্কারটি গণিতের রাজ্যে তৃতীয় মর্যাদাপূর্ণ পুরস্কার হিসেবে বিবেচিত। প্রতিবছর দেয়ার কথা থাকলেও দেখা যায় যে প্রতিবছর পুরস্কারের ঘোষণা আসে না। ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ৬৫ জন গণিতবিদ এই পুরস্কার পেয়েছেন। বিজয়ী গণিতবিদগণ একটি সনদ ও ১ লক্ষ আমেরিকান ডলার পেয়ে থাকেন। আমেরিকার ম্যাসাচুসেটস ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজির (এমআইটি) গণিতের অধ্যাপক জর্জ লুসযতিগ ২০২২ সালে এই পুরস্কার পেয়েছেন।

চার্ন (Chern) পদকঃ

 

আন্তর্জাতিক গণিত কংগ্রেস প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর গণিতশাস্ত্রের সর্বোচ্চক্ষেত্রে আজীবন গবেষণার স্বীকৃতিস্বরূপ ২০১০ সাল থেকে এই পুরস্কার দিয়ে আসছে। চাইনীজ গণিতবিদ শিন-শেন চার্নের নামানুসারে এই পুরস্কারের নামকরণ করা হয়। পুরস্কার বিজয়ী একটি পদক, আড়াই লক্ষ আমেরিকান ডলার নগদ অর্থ পুরস্কার এবং আরও আড়াই লক্ষ আমেরিকান ডলারের সাহায্য তহবিল পান যা গণিতশাস্ত্রের গবেষণায় ব্যয় করার সুযোগ থাকে। ২০২২ সালে আমেরিকার হার্ভার্ড  ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক গণিতবিদ ব্যারি চার্লস মাযুর এই পুরস্কারে ভূষিত হন।

ছবি ৩: চার্ন পদক

শ’ (Shaw) পুরস্কারঃ 

 

২০০২ সাল থেকে হংকংয়ের শ’ প্রাইজ ফাউন্ডেশন প্রতিবছর তিনটি বিভাগে শ’ পুরস্কার দিয়ে থাকে যার একটি গণিতবিজ্ঞানে দেওয়া হয়। এই পুরস্কারকে “প্রাচ্যের নোবেল” বলা হয়। হংকং-এর বিনোদন জগতের প্রভাবশালী ব্যক্তিত্ব এবং দানবীর রান রান শ’ এই পুরস্কারের প্রচলন করেন। পুরস্কার বিজয়ী শ’-এর প্রতিকৃতি সম্বলিত একটি পদক, একটি সনদপত্র এবং নগদ ১২ লক্ষ আমেরিকান ডলার পেয়ে থাকেন। ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ২৯ জন গণিতবিদ শ’ পুরস্কার পেয়েছেন। আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক নোগা অ্যালন এবং ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ অক্সফোর্ডের অধ্যাপক এহুদ হ্রুশভস্কি ২০২২ সালের গণিতে শ’ পুরস্কার পান। 

ছবি ৪: শ’ পদক

গাউস (Gauss) পুরস্কারঃ

বিখ্যাত জার্মান গণিতবিদ কার্ল ফ্রেডরিখ গাউসের নামানুসারে ২০০৬ সাল থেকে ব্যবসা-বাণিজ্য, প্রযুক্তি এমনকি দৈনন্দিন জীবনে গণিতের প্রায়োগিক গবেষণার মাধ্যমে ভূমিকা রাখার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক গণিত সংঘ এবং জার্মান গণিত সোসাইটি প্রতি চার বছর অন্তর অন্তর এই পুরস্কার ঘোষণা করে। পুরস্কার বিজয়ী একটি পদক এবং নগদ ১০ হাজার ইউরো পেয়ে থাকেন। এখন পর্যন্ত ৫ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। ২০২২ সালে আমেরিকার প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইল্লিয়ট হারশেল লিএব গাউস পুরস্কার পান। 

অ্যাবাকাস (Abacus) পদকঃ

 

আন্তর্জাতিক গণিতবিদদের সংঘ ১৯৮২ সাল থেকে প্রতি চার বছর পর পর তথ্যবিজ্ঞানে গণিতের মাধ্যমে অবদান রাখার জন্য তরুণদের এই মেডেল দিয়ে আসছে। ২০২২ সালের পূর্বে ফিনল্যান্ডের বিখ্যাত গণিতবিদের নামানুসারে এই পদকের নাম ছিল “রলফ নিভানলিন্না পুরস্কার”। ২০২২ সাল পর্যন্ত মোট ১১ জন এই পদক পেয়েছেন। ইসরাইলি গণিতবিদ এবং তত্ত্বীয় কম্পিউটার বিজ্ঞানী মার্ক ব্রাভেরমান ২০২২ সালে অ্যাবাকাস পদক পান। 

ছবি ৫: অ্যাবাকাস পদক

রামানুজান (Ramanujan) পুরস্কারঃ

 

২০০৫ সাল থেকে উন্নয়নশীল দেশের অনূর্ধ্ব পঁয়তাল্লিশ বছর বয়স্ক তরুণ গণিতবিদদের গবেষণায় উৎসাহিত করার লক্ষ্যে বিখ্যাত ভারতীয় গণিতবিদ শ্রীনিভাস রামানুজানের নামানুসারে ইতালির ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর থিওরেটিক্যাল ফিজিক্স কর্তৃক এই পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত মোট ১৭ জন এই পুরস্কার পেয়েছেন। পুরস্কার বিজয়ী ১৫ হাজার আমেরিকান ডলার পেয়ে থাকেন তার গবেষণার উন্নয়নের জন্য। ২০২১ সালে ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইন্সটিটিউটের অধ্যাপক নীনা গুপ্তা এই পুরস্কার পান। 

ছবি ৬: রামানুজান পুরস্কার

ব্রেকথ্রু (Breakthrough) পুরস্কারঃ

 

২০১৩ সালে ঘোষিত ব্রেকথ্রু পুরস্কার সিরিজের অন্তর্গত একটি বাৎসরিক পুরস্কার হলো গণিতের ব্রেকথ্রু পুরস্কার। ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা মার্ক জুকারবার্গ, ইসরাইলি-রাশিয়ান উদ্যোক্তা ইয়ুরি মিলনার এবং অন্যান্যরা মিলে এই পুরস্কার সিরিজটি প্রতিষ্ঠা করেন। এই পুরস্কারের অর্থ মূল্য ৩০ লক্ষ আমেরিকান ডলার। বিজ্ঞানীদের মর্যাদা বৃদ্ধি এবং তরুণ ছাত্রছাত্রীদের বিজ্ঞানী হতে উৎসাহিত করার উদ্দেশ্যে এই পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়। ২০২২ সালে জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক তাকুরো মছিযুকি এই পুরস্কার পান। এছাড়াও, ব্রেকথ্রু পুরস্কার কমিটি ২০১৬ সাল থেকে আরও তিনজনকে নির্বাচিত করছেন ১ লক্ষ আমেরিকান ডলার অর্থমূল্যের “নিউ হরাইজন ইন ম্যাথেমেটিক্স” পুরস্কারের জন্য। এর পাশাপাশি ২০২১ সাল থেকে তিনজন মহিলা গণিতবিদকে ৫০ হাজার আমেরিকান ডলার সমমূল্যের “মারিয়াম মির্জাখানি নিউ ফ্রন্টিয়ার পুরস্কার” দেওয়া হচ্ছে। 

ছবি ৭: ব্রেকথ্রু পুরস্কার

মিলেনিয়াম (Millennium) পুরস্কারঃ

 

কলোরাডো ভিত্তিক প্রতিষ্ঠান ক্লে ম্যাথেমেটিক্স ইন্সিটিউট গণিতে জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর লক্ষ্যে সাতটি সুপরিচিত খুবই জটিল গাণিতিক সমস্যা নির্বাচন করে, যার প্রতিটি সমস্যা সমাধানের জন্য ১০ লক্ষ আমেরিকান ডলার পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। ২০০০ সালে ঘোষণার পর থেকে অনেক গণিতবিদই এই সমস্যাগুলোর সমাধানের জন্য চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এখন পর্যন্ত মাত্র একটি সমস্যার সমাধান করা সম্ভব হয়েছে। রাশিয়ান গণিতবিদ গ্রিগরি পেরেলম্যান “পয়েনকেয়ার কনজাকচার” সমাধান করে ২০১০ সালে এই পুরস্কার জিতে নেন, যদিও তিনি পুরস্কারটি নিতে অস্বীকৃতি জানান। বাকি ৬টি সমস্যা এখনো অসমাধানকৃত অবস্থায় আছে। 

ছবি ৮: মিলেনিয়াম পুরস্কারের সমস্যাবলী

এই পুরস্কারগুলো বাদেও আরো অনেক আন্তর্জাতিক এবং দেশভিত্তিক পুরস্কার রয়েছে গণিতের জন্য, গণিতের জ্ঞানের পরিধি বাড়ানোর জন্য, গণিতবিদদের সম্মান জানানোর জন্য। যদিও জ্ঞান চর্চা চলে আপন গতিতে, তবুও যেকোনো পুরস্কার উৎসাহিত করে সেই গতিকে নতুন ছন্দ খুঁজে পেতে। 

 

মোঃ এনামুল ইসলাম একজন গণিতপ্রেমী প্রকৌশলী এবং শিক্ষক 

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

1 COMMENT

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles