back to top
8 C
New York
Sunday, November 24, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

বগুড়ায় সরকারি বই ‘লুট’

মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়। ছবি: সংগৃহীত। –

মাসুম হোসেন –

দীর্ঘ ৯ বছর ধরে এক স্কুলের কক্ষে মাধ্যমিকের সরকারি বই রাখা হত। সম্প্রতি ওই কক্ষে বইগুলো আর পাওয়া যাচ্ছে না। এরপরই সরকারি বই গায়েব হয়েছে বলে গুঞ্জন ওঠে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বই বিক্রির কথা স্বীকারও করেন। অথচ পরে তিনিই থানায় জিডি করেছেন বই গায়েব হওয়ার বিষয়ে।

 

এমন ঘটনা বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার। মাধ্যমিকের সরকারি বইগুলো ওই উপজেলার মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হয়েছিল। সেখানে এখন বইগুলোর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না।

 

অভিযোগ উঠেছে, প্রায় আট লাখ টাকায় বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে। ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক বই বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত।

 

বৃহস্পতিবার বই গায়েবের বিষয়ে ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক শাজাহানপুর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। সরকারি বইগুলো তার প্রতিষ্ঠানের এক কক্ষ থেকে গায়েব হয়েছে বলে জিডিতে উল্লেখ করা হয়েছ। এমনটাই বলেছেন প্রধান শিক্ষক ।

 

কিন্তু গত রোববার এক ভিডিও স্বাক্ষাৎকারে সাংবাদিকদের প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেশি হওয়ায়, বই রাখা ওই রুমটি ফাঁকা করা দরকার ছিল। আমি মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে বিষয়টি জানাই। পরে উনি (উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা) বইগুলো অন্য কোথাও স্থানান্তর করতে বলেন। সেকারণে পুরাতন কিছু নষ্ট বই বিক্রি করা হয়েছে। বইগুলো ২০১৫-২০১৬ সালের ছিল। একই সঙ্গে আমাদের অপ্রয়োজনীয় পুরোনো কিছু কাগজপত্রও বিক্রি করেছি।’

 

তবে এখন তিনি ভিন্ন কথা বলছেন। মুঠোফোনে তিনি বলেন, ‘সরকারি বই গায়েব হওয়ার বিষয়ে আমি কিছু জানিনা। থানায় জিডি করেছি, উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস তদন্ত করে বইয়ের সন্ধান করবে।’

 

জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মাহবুবুল হোসেন বলেন, ‘ প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী এ বছর এসএসসি পরীক্ষা শুরুর আগে আমাকে জানিয়েছিলেন যে, জমিয়ে রাখা পুরোনো বইগুলো স্থানান্তর করতে হবে। পরে আমি বইগুলো নিলামে বিক্রির জন্য ইউএনও’র সঙ্গে কথা বলি। ওই সময় ইউএনও আমাকে সিদ্ধান্ত জানাননি। এখন এসে দেখছি স্কুলের কক্ষে রাখা বইগুলো আর নেই।’

 

কথা হয় বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলা মাধ্যমিক  শিক্ষা কর্মকর্তা মো. তৌফিক আজিজের সঙ্গে।  তিনি এর আগে, বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

 

তিনি বলেন, ‘গত জুন মাসে বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলা থেকে বদলি হয়ে আদমদীঘিতে এসেছি। ওই কক্ষে কতগুলো বই ছিল তার সঠিক হিসাব বলা কঠিন। তবে প্রতিবছর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে বই বিতরণ শেষে কিছু বই বেচে যায়। সেই বইগুলো মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা হত।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলার অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান চাহিদার তুলনায় বেশি বই নিত। পরে অতিরিক্ত বইগুলো তাদের কাছ থেকে ফেরত নিয়ে ওই কক্ষে রাখা হত। বই রাখার কক্ষটি অনেক বড়। সেখানে ৬৫-৭০ ভাগ অংশ জুড়ে পুরোনো বই ছিল। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসের নিজস্ব গুদাম না থাকায় স্কুলের ওই কক্ষে বই রাখা হত।’

 

মো. তৌফিক আজিজ আরও বলেন, ‘পুরোনো বইগুলো সরকারি অনুমতি নিয়ে নিলামে বিক্রি করা হয়। পরে বই বিক্রির টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হয়।’

 

মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আব্দুল হালিম দুদু বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষা প্রথম দিন (১৫ সেপ্টেম্বর) থেকে সরকারি বইগুলো বিক্রি শুরু করা হয়। পরে ১২-১৫ দিনের মধ্যে বইগুলো বিক্রি করা হয়েছে।  প্রতিরাতে স্কুলের ওই কক্ষ থেকে বইগুলো বের করে পিকআপে তোলা হত।’

 

তিনি আরও বলেন, ‘২০১৩ থেকে শুরু করে ২০২১ সাল পর্যন্ত প্রতিবছরই বিদ্যালয়ের ওই কক্ষে বই রাখত উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস।’

 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই স্কুলের এক সহকারী শিক্ষক বলেন, ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকী সরকারি বইগুলো বিক্রির সঙ্গে সরাসরি জড়িত রয়েছেন। স্কুলের ওই রুমে প্রায় দশ পিকআপ বই ছিল। সেগুলো প্রায় আট লাখ টাকায় বিক্রি করা হয়েছে।’

 

জানতে চাইলে মাঝিড়া মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি নুরুজ্জামান বলেন,  ‘স্কুলের প্রধান শিক্ষক বই বিক্রির সঙ্গে জড়িত নেই। স্কুলের কিছু বেয়াদব শিক্ষক তাকে ফাঁসানোর জন্য ষড়যন্ত্র করছেন। ওই শিক্ষকরাই বইগুলো বিক্রি করে প্রধান শিক্ষক মির্জা দিলরুবা লাকীকে দোষারোপ করছেন। যদিও বিষয়টি আমার পুরোপুরি জানা নেই।’

 

জানতে চাইলে শাজাহানপুর থানার অফিসার্স ইনচার্জ (ওসি) মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, স্কুলের কক্ষ থেকে সরকারি বই গায়েব হয়েছে, এ বিষয়ে থানায় একটি সাধরণ ডায়েরি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ মামলা করলে গুরুত্বসহকারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

জানতে চাইলে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হযরত আলী বলেন, ‘সরকারি বই গায়েব  হওয়ার বিষয়ে আমাকে এখন পর্যন্ত কেউ জানায়নি। খোঁজ খবর নিয়ে এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles