ছবিঃ মেট্রোপলিস-
মাসুম হোসেন-
বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করার অভিযোগে অতিরিক্ত জেলা জজ রুবাইয়া ইয়াসমিনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। তার বিচারিক ক্ষমতা কেড়ে নিয়ে আইন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত করা হয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো. মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি সার্কুলার জারি করা হয়।
এর আগে, মঙ্গলবার সকালে ওই স্কুলে অভিভাবক সমাবেশ চলাকালীন এক অভিভাবককে পা ধরে ক্ষমা চাইতে বাধ্য করা হয়। এরপর ওই দিন বিকেল ৩ টা থেকে তিন শতাধিক শিক্ষার্থী বিচারকের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে স্কুলের সামনে সড়ক অবরোধ করে। তারা ওই দিন রাত আটটা পর্যন্ত সড়কে অবস্থান করে। পরে সেখানে জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম পৌঁছে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন।
আলোচনার এক পর্যায়ে জেলা প্রশাসকের আশ্বাসে সেদিন রাত সোয়া ৯ টার দিকে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন স্থগিত করে বলে জানান বগুড়া সদর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই খোরশেদ আলম। এ ঘটনায় সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন জেলা প্রশাসক।
শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, ওই বিচারক এসে ক্ষমা চাওয়ার পর তারা আন্দোলন স্থগিত করবেন।
অভিযুক্ত রুবাইয়া ইয়াসমিন বগুড়া অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক।
শিক্ষার্থীরা জানায়, স্কুলের নিয়ম অনুযায়ী শিক্ষার্থীরা নির্দিষ্ট দিন পরপর ক্লাসরুম ঝাঁড়ু দেয়। কিন্তু বিচারকের মেয়ে জারা খান এ নিয়ম মানে না। অন্য শিক্ষার্থীরা ক্লাসরুম ঝাঁড়ু দিলেও জারা তা করে না। অন্য ছাত্রীদের গরিবের মেয়ে বলে অপমাণও করে জারা। বিষয়টি নিয়ে অন্যান্য শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রায়ই তার বাকবিতণ্ডা হত। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে গত সোমবার রাতে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গালিগালাজ করে ফেসবুকে মাই ডে দেয় জারা। তার ওই পোস্ট দেখে কয়েকজন সাধারণ শিক্ষার্থী ক্ষিপ্ত হয়। তাদের মধ্যে একজন ওই পোস্টের স্ক্রিনশট দিয়ে প্রতিবাদ জানিয়ে ফেসবুকে আরেকটি স্ট্যাটাস দেয়।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মঙ্গলবার সকালে স্কুলের অভিভাবক সমাবেশে উপস্থিত হন বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিন। সেখানে এসে স্কুলের এক কক্ষে তিন শিক্ষার্থীসহ তাদের অভিভাবককে ডেকে নেন । এরপরে সাইবার ক্রাইম অপরাধের অভিযোগে মামলা দেওয়ার হুমকি দেন। এরই এক পর্যায়ে অষ্টম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর মাকে পা ধরে মাফ চাইতে বাধ্য করেন ওই নারী বিচারক। বিচারকের মেয়ে জারাও অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বিচারক রুবাইয়া ইয়াসমিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
শিক্ষার্থীদের অভিযোগ শুধু ওই বিচারকের ওপরই নয়, প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধেও।
তারা অভিযোগ করে, বিচারকের মেয়ে জারা ক্লাসরুম ঝাঁড়ু না দিলেও প্রধান শিক্ষক মোছা. রাবেয়া খাতুন তাকে কিছুই বলেন না। সাধারণ শিক্ষার্থী ও বিচারকের মেয়ের মধ্যে বৈষম্যমূলক আচরণ করেন তিনি। এমনকি ওই ঘটনা নিয়েও প্রধান শিক্ষক বিচারকের মেয়ের পক্ষ নেন।
এদিকে, প্রধান শিক্ষকসহ অন্য শিক্ষকদের কোনো দায়িত্ব অবহেলা বা গাফিলতি আছে কিনা এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াছমিনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন জেলা প্রশাসক মো. সাইফুল ইসলাম।
মঙ্গলবার রাতে জেলা প্রশাসক বলেন, বিচারকের বিষয়টি উচ্চ আদালত ও আইন মন্ত্রণালয় জেনেছে। এ ঘটনায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।