back to top
-8.3 C
New York
Sunday, December 22, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

বাংলাদেশঃ ভূ-রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্ভাবনা

মাযহারুল ইসলাম ফারাবী –

বাংলাদেশ বর্তমান সময়ে নিজ ভৌগোলিক অবস্থান, ভূ-রাজনীতি ও অসীম সম্ভবনাময় অর্থনীতির কারণে আন্তর্জাতিক রাজনীতির এক গুরুত্বপূর্ণ অংশে পরিণত হয়েছে। সমুদ্র বিজয়, চীনের সিল্ক রোডের গুরুত্বপূর্ণ অংশ, ভারতের সেভেন সিস্টার বা ৭ রাজ্যের প্রবেশমুখ, এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা আর জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যুতে শক্ত অবস্থান ও নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছে।

১৪ই মার্চ ২০১২ সালে জার্মানিতে অবস্থিত সমুদ্র আইন বিষয়ক আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালের রায়ে মিয়ানমারের সাথে বিরোধপূর্ণ ১,১১,৬৩১ বর্গ কিলোমিটার আর ৭ই জুলাই ২০১৪ সালে নেদারল্যান্ডের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতের রায়ে ভারতের সাথে বিরোধপূর্ণ ১৯,৪৬৭ বর্গ কিলোমিটার সমুদ্রসীমায় বাংলাদেশের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়, যা বাংলাদেশের সমুদ্র বিজয় বলে অবহিত করা হয়।

এই সমুদ্র বিজয়ের ফলে ব্লু ইকোনমির এক বিশাল সম্ভাবনা উন্মোচিত হয়েছে। সুতরাং এ সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য আমাদের দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হবে। এরই অংশ হিসেবে সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেরিটাইম বিশ্ববিদ্যালয়, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে সমুদ্রবিদ্যা বিষয়ক বিভাগ চালু করেছে। এছাড়াও সমুদ্র সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণে নিজস্ব দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সমুদ্র অর্থনীতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞ দেশের সাথে জ্ঞান এবং দক্ষতা বিনিময় চুক্তি করতে হবে। আবার নৌ পথে মাদক চোরাচালান বা অন্যান্য অপরাধ কমানোর জন্য ভারত আর মিয়ানমারের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে একত্রে কাজ করতে হবে।

দ্বিতীয়ত, চীনের বহুল আলোচিত বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভের এক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে ২১ শতকের মেরিটাইম সিল্ক রোড প্রতিষ্ঠা করা যার প্রধান উদ্দেশ্য হলো মহাসড়ক, রেল, আর সমুদ্রপথের যোগাযোগের মাধ্যমে বিস্তৃত পরিসরে বাণিজ্য কর্মকাণ্ড সম্প্রসারণ আর আঞ্চলিক অর্থনীতিতে সহযোগিতা বৃদ্ধি করা।

এরই ফলশ্রুতিতে চীন দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সমুদ্র বন্দর গুলোকে একই নেটওয়ার্কের অন্তর্ভুক্ত করছে যার অংশ হিসেবে পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের গাওদার গভীর সমুদ্র বন্দর, শ্রীলংকার হাম্বানটোটোতে গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মিত হয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় চীন সরকার বাংলাদেশের কক্সবাজারের সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ চুক্তি করতে চেয়েছিল। তবে ভারত সরকারে চাপে শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকার এই প্রকল্প থেকে পিছিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিল। তবে এ ব্যাপারটা একদম পরিষ্কার যে ভূ-রাজনীতির আধিপত্যে প্রতিবেশী দুই পরাশক্তিই বাংলাদেশকে কাছে টানতে চাচ্ছে।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের উত্তরপূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত ভারতের সেভেন সিস্টার্স নামে পরিচিত সাতটি প্রদেশের (আসাম, মেঘালয়, অরুনাচল, নাগাল্যান্ড, মনিপুর, মিজোরাম, ত্রিপুরা) ভৌগলিক অবস্থান এবং রাজনৈতিক পরিবেশ ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে অনেকটাই বিচ্ছিন্ন। এইসব প্রদেশের মানুষদের জাতিগত বৈশিষ্ট্য, জীবনযাত্রা, সংস্কৃতি সবই স্বতন্ত্র। তাই এই প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন প্রদেশে বিভিন্ন বিদ্রোহী গোষ্ঠী স্বাধীনতার জন্য লড়ে যাচ্ছে।

সেভেন সিস্টার্স প্রদেশগুলোর অর্থনৈতিক ও সামাজিক নিরাপত্তা আর বিচ্ছিন্নতা রোধে ভারত সরকার অনেকাংশেই বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল। এই প্রদেশগুলোতে ভারতের যোগাযোগের একমাত্র উপায় হল নেপাল ও বাংলাদেশের মাঝে অবস্থিত শিলিগুড়ি করিডোর যাকে চিকেন নেক বলা হয়। এই চিকেন নেক যদি কখনো স্বাধীনতাকামী বা চীন কর্তৃক আক্রান্ত হয় তাহলে এদের প্রতিরোধ বা দমন করতে গেলে মূল ভূখণ্ড থেকে একমাত্র পথ হবে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ ভারতকে সেভেন সিস্টার্স যাওয়ার জন্য ও সমুদ্র ব্যবহারের ট্রানজিট আর নানান ইস্যুতে সুবিধা দিলেও এ যাবত ছিটমহল বিনিময় ছাড়া তেমন উল্লেখযোগ্য সুবিধা পায়নি। তিস্তা পানি বন্টন চুক্তি, টিপাইমুখ বাঁধ সমস্যা সমাধান, আর ভারতের বাজারে পণ্যের শুল্ক কমানো এখন বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সময়ের দাবি।

চতুর্থত, প্রতিবেশী ভারত ও মায়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র বিরোধ মিটিয়ে ঐতিহাসিক সমুদ্র বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের সার্বভৌম অঞ্চল বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই বর্তমানে এর সার্বভৌম নিরাপত্তা নিশ্চিত করা বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরই ধারাবাহিকতায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দেশের তিন বাহিনীকে আধুনিকায়ন করতে “ফোর্সেস গোল ২০৩০” বাস্তবায়ন করছে সরকার।

এরই অংশ হিসেবে নৌবাহিনীকে ত্রিমাত্রিক শক্তিশালী করার লক্ষ্যে চীনের কাছ থেকে দুইটি সাবমেরিন ক্রয় করেছে বাংলাদেশ, যা দেশের নৌশক্তিকে বহুগুনে বাড়িয়ে দিয়েছে । সাবমেরিনের সুষ্ঠু পরিচালনা, রক্ষণাবেক্ষণ ও নিরাপদ জেটি সুবিধার জন্য কক্সবাজারের কুতুবদিয়ার পেকুয়ায় দেশের প্রথম সাবমেরিন ঘাঁটি বানৌজা শেখ হাসিনার উদ্বোধন করা হয়েছে।

ফোর্সেস গোল ২০৩০ লক্ষ্য পূরণে তাই বিভিন্ন দেশ, যেমন – তুরস্ক, রাশিয়া, ফ্রান্স সহ অনেক দেশ বাংলাদেশের কাছে সামরিক অস্ত্র বিক্রি করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।  এরই অংশ হিসেবে তুরস্কের তৈরি বায়রাক্টার টিবি-টু ড্রোন কিনেছে বাংলাদেশ। আবার জাহাজ শিল্পের উন্নতিতে তুরস্কের বিনিয়োগ, রোহিঙ্গা ইস্যুতে আকণ্ঠ সমর্থন কিংবা রাশিয়ার বিনিয়োগে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র এভাবেই অর্থনীতিতে অবদান রেখে যাচ্ছে।

পঞ্চমত, দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ভৌগলিকভাবে বাংলাদেশের অবস্থান ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের ৭ প্রদেশে আর মিয়ানমারে সশস্ত্র স্বাধীনতাকামী সংগঠন সক্রিয় রয়েছে, যেমন – নাগাল্যান্ডের ফেডারেশন ফ্রন্ট আর্মি, আসামে উলফা, মিয়ানমারে আরাকান আর্মি, আর রোহিঙ্গা সেলভেশন আর্মি, যা আঞ্চলিক নিরাপত্তা এবং অর্থনীতির জন্য হুমকি স্বরূপ। বাংলাদেশ সরকার জঙ্গি দমনে জিরো টলারেন্স ও জঙ্গি কর্মকান্ড প্রতিরোধে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। পাশাপাশি প্রতিবেশী দেশগুলোর সাথে তথ্য আদান-প্রদান আঞ্চলিক নিরাপত্তা, আঞ্চলিক বাণিজ্য আর যোগাযোগে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।

ষষ্ঠত, জলবায়ু পরিবর্তন বৈশ্বিকভাবে যে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব সৃষ্টি করেছে তার ফলে সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে বাংলাদেশ। আশঙ্কা করা হচ্ছে ২০৫০ সালের মধ্যে বৈশ্বিক তাপমাত্রা যদি ২.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পায় তাহলে বাংলাদেশের ১৭ শতাংশ ভূমি সমুদ্রের নিচে তলিয়ে যাবে। সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধির সাথে জমি বিলীন হওয়ার পাশাপাশি অন্যত্র তীব্র লবণাক্ততা দেখা দিবে যা চারিদিকে বিশুদ্ধ পানির সংকট সৃষ্টি করবে। ফলে কৃষি, স্বাস্থ্যসহ সব ক্ষেত্রেই তীব্র প্রাকৃতিক ও মানবিক দুর্যোগ দেখা দিবে যা দেশের অর্থনীতি আর সামাজিক নিরাপত্তায় বাধার সৃষ্টি করবে। তাই জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব বিশ্ব নেতৃবৃন্দের সামনে যথাযথ তুলে ধরতে আর জলবায়ু ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে নেতৃত্ব দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে।

সর্বোপরি “সবার সাথে বন্ধুত্ব, কারো সাথে শত্রুতা নয়” – এই পররাষ্ট্র নীতি মেনে জাতীয় অর্থনীতি এবং আর্থসামাজিক উন্নয়নের স্বার্থে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে হবে।

মাযহারুল ইসলাম ফারাবী বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অফ প্রফেশনালসের (বিইউপি) দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের ছাত্র। 

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles