আর্টিফিসিয়াল রেলগেট।
মাসুম হোসেন –
রেলগেট নিয়ন্ত্রণে মানুষের প্রয়োজন নেই। স্বংক্রিয়ভাবেই নেমে যাবে ব্যারিকেট। আর সিগন্যালের মাধ্যমে সতর্ক হবেন পথচারীরা। এতে কমবে দুর্ঘটনা, নিরাপদ হবে রেলওয়ে এলাকায় চলাচল। শুধু তা-ই নয়, কোনো ধরণের ওষুধ ব্যবহার ছাড়াই হবে মশা নিধন।
এমন দুটি যন্ত্রের দেখা মেলে বগুড়ায় শুরু হওয়া ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায়। রেল দুর্ঘটনা রোধে আর্টিফিসিয়াল রেলগেট উদ্ভাবন করেছে বগুড়া জিলা স্কুলের শিক্ষার্থীরা। আর বৈজ্ঞানিক মশা মারার ফাঁদ প্রদর্শন করছে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
এছাড়াও মেলাতে দেখা গেছে ভূমিকম্প এলার্ম যন্ত্রের। এই যন্ত্রটি নিয়ে এসেছে বগুড়ার মালতীনগর উচ্চ বিদ্যালয়। অনেক সময় ভূমিকম্প শুরু হলেও বাড়িসহ কর্মস্থলে থাকা মানুষের তা বুঝতে পারেন না। ভূমিকম্প এলার্ম যন্ত্রটি সিগন্যালের মাধ্যমে সবাইকে তা জানিয়ে দিবে। এতে ঝুঁকিতে থাকা মানুষেরা সময়মত নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে পারবেন।
আর্টিফিসিয়াল রেলগেট সম্পর্কে জিলা স্কুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মুনতাসির, ইন্দ্রনীল ও ফাতিন বলে, ট্রেন কাছাকাছি চলে আসলেও অনেক সময় পথচারীরা তা বুঝতে পারেন না। ফলে তারা জীবন হারানোর ঝুঁকিতে থাকেন। সেক্ষেত্রে আর্টিফিসিয়াল রেলগেট তাদেরকে সতর্ক করবে। রেলগেট এলাকায় নির্দিষ্ট দূরত্বে বসানো দুটি যন্ত্রের মাধ্যমে স্বংক্রিয়ভাবে রেলগেটের ব্যারিকেট নেমে যাবে। এছাড়াও ট্রেন প্রথম যন্ত্র পার হওয়া মাত্রই সিগন্যাল বেজে উঠবে। এরপর ট্রেনটি দ্বিতীয় যন্ত্র কাছাকাছি এলেই রেলগেটের ব্যাািরকেট নেমে যাবে। এভাবে কোনো মানুষ ছাড়াই রেলগেট নিয়ন্ত্রণ হবে।
মশা মারার ফাঁদ সম্পর্কে বগুড়া সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী মাইশা মাহাদিয়া বলে, ‘মশার নিধনে কোনো ধরণের ওষুধ লাগবে না। যন্ত্র ব্যবহার করেই মশা নিধন সম্ভব। ওই যন্ত্রে থাকবে একটি ছোট বাল্ব, যা রাতে ডিম লাইট হিসেবে কাজ করবে, একই সঙ্গে মশা নিধন হবে।’
মাইশা আরও বলেন,‘যন্ত্রটি রাতে আলো ছড়াবে। সেই আলো দেখে মশা যন্ত্রের কাছে আসবে। তখনই বাল্বের কাছে থাকা ছোট এক ফ্যানের মাধ্যমে মশা নিধন হবে। মশা নিধনের এই যন্ত্রটি সরাসরি বিদ্যুৎ সংযোগের মাধ্যমে অথবা ব্যাটারি ব্যবহার করেও চালু রাখা যাবে।’
বগুড়ায় দুইব্যাপী শুরু হওয়া ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলা বুধবার সকাল ১০ টার দিকে উদ্বোধন করা হয়। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. জিয়াউল হক। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের উদ্যোগে এটুআই প্রোগ্রামের সহযোগিতায় ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলাটি আগামীকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত চলবে। ঐদিন বিকেল চারটার দিকে মেলার সমাপনী অনুষ্ঠান করা হবে।
এই মেলায় চারটি প্যাভিলিয়নে ১০৩টি স্টল বসানো হয়েছে। চারটি প্যাভিলিয়ন হলো উদ্ভোবনী উদ্যোগ এবং স্টার্টআপ, ডিজিটাল সেবা, হাতের মুঠোয় সেবা ও শিক্ষা, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থান। এছাড়াও এ মেলা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছে অনলাইন কুইজ প্রতিযোগীতার।
উদ্বোধন অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পদোন্নতিপ্রাপ্ত পুলিশ সুপার আলী হায়দার চৌধুরী, জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আশরাফুল মমিন খান, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মজিবর রহমান মজনু ও সাধারণ সম্পাদক রাগেবুল আহসান রিপুসহ আরও অনেকে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ডিসি মো. জিয়াউল হক বলেন, ‘নবীন ও শিক্ষার্থীদের হাতেই দেশের আগামী ভবিষ্যত। তাদেরকে ডিজিটাল ক্ষেত্রে দক্ষ করে তোলার জন্য এই উদ্ভাবনী মেলার আয়োজন করা হয়েছে।’
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ‘জেলাব্যাপী চলা ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলার মাধ্যমে স্কুল পর্যায়ে মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক এবং উন্মুক্ত ক্যাটাগরিতে যারা ভালো করবে তাদেরকে বিভাগীয় পর্যায়ে প্রদর্শনীর জন্য পাঠানো হবে। এছাড়াও অন্যান্য স্টলগুলোকে সেবারপ্রেক্ষিতে মূল্যয়নের মাধ্যমে আমরা নিজ উদ্যোগে পুরস্কৃত করবো।’