অ্যাডভোকেট আরিফুর রহমান-
বাংলাদেশে সম্পত্তির মালিকানা প্রতিষ্ঠা করা একটি কষ্টসাধ্য কাজ। একজন ক্রেতা হিসেবে সবার জমিজমা সম্পর্কে সম্যক ধারণা রাখা প্রয়োজন। অন্যথায় জাল দলিল ও ভুয়া জমি কিনে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
একটি সম্পত্তির মালিকানা নিরীক্ষা করার জন্য একজন ক্রেতার নিম্নলিখিত কাজ করা উচিত:
-
সম্পত্তি সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ: সম্পত্তি সম্পর্কিত সমস্ত প্রাসঙ্গিক তথ্য সংগ্রহ করা উচিত। বিশেষ করে দাগ সংখ্যা, খতিয়ান সংখ্যা, বর্তমান মালিক, হোল্ডিং নাম্বার পরীক্ষা করা অপরিহার্য। এই তথ্য ছাড়া সম্পত্তির রেকর্ড চেক করা সম্ভব না।
-
মালিকানার চেইন স্থাপন: পরবর্তীতে সম্পত্তির ইতিহাস খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিত। সম্পত্তির বর্তমান মালিক ও স্থানীয় মানুষ থেকে একটি প্রাথমিক ধারণা পাওয়া যেতে পারে। এই ইতিহাস সম্পত্তির প্রাসঙ্গিক নথির সাথে সামঞ্জস্য রেখে চেক করা উচিত।
-
টাইটেল ডিড বা মূল দলিলের সত্যতা পরীক্ষা: সম্পত্তির নথি চেক করার সময় প্রথম এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো টাইটেল ডিড বা মূল দলিলের সত্যতা চেক করা। এই কাজ সাব রেজিস্ট্রি অফিসে অনুসন্ধানের মাধ্যমে করা যেতে পারে। সাব রেজিস্ট্রি অফিসে সব দলিলের মূল নিবন্ধনের একটি রেকর্ড থাকে। সাব রেজিস্ট্রারকে সরকারি ফি প্রদান করে মূল দলিলের সার্টিফাইড অনুলিপি সংগ্রহ করা যায়। উত্তরাধিকার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মালিকানার ক্ষেত্রে পূর্বসূরি এবং পার্টিশন ডিড/বন্টন নামা (যদি থাকে) দলিল চেক করা উচিত। সাব রেজিস্ট্রি অফিসে পূর্ববর্তী অন্তত ১২ বছরের রেকর্ড অনুসন্ধান করা যুক্তিযুক্ত। সম্পত্তির মালিকানা হস্তান্তরিত বা বন্ধকী আছে কিনা, অনুসন্ধানে তা পাওয়া যাবে।
-
খতিয়ান/পর্চা চেক করুন: স্থানীয় ভূমি তহসিল অফিস বা ডিসি অফিসে খতিয়ান/পর্চা পাওয়া যায়। সমস্ত প্রাসঙ্গিক খতিয়ান/পর্চার প্রত্যয়িত কপি পরীক্ষা করা উচিত। মালিকের নাম দলিলের প্রাপ্য ইতিহাসের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে এবং তার গড়মিল হলে যথাযথ কারণ/ব্যাখ্যা থাকা উচিত।
-
মিউটেশন বা খারিজ খতিয়ান চেক করুন: যদি বর্তমান মালিকের নাম সর্বশেষ খতিয়ান/পর্চায় উপস্থিত না থাকে, তবে খতিয়ান/পর্চার পুরোনো মালিকের জায়গায় তার নাম পরিবর্তন করা বাধ্যতামূলক। মিউটেশন তিনটি নথি থাকতে হবে – (১) মিউটেশনের প্রস্তাব পত্র (নামজারী সমভাগ প্রস্তাবপত্র); (২) – ডুপ্লিকেটেড কার্বন রশিদ (ডিসিআর); এবং (৩) মিউটেশন বা খারিজ খতিয়ান। কোন ব্যক্তি অন্য ব্যক্তির কাছে মিউটেশন বা খারিজ খতিয়ান ছাড়া সম্পত্তির মালিকানা স্থানান্তর করতে পারে না।
-
যদি সম্পত্তি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া হয়ে থাকেঃ বাংলাদেশে অনেক সময় সম্পত্তি সরকারের কাছ থেকে লিজ নেয়া হয়। এই ধরনের লিজের মেয়াদও বিভিন্ন রকমের হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সরকারি সংস্থা, যেমন – রাজউক, সিডিএ ইত্যাদির মাধ্যমে এই সম্পত্তিগুলি ইজারা দেয়া হয়। তাই এধরণের সম্পত্তির ক্ষেত্রে আগ্রহী ব্যাক্তিদের সশরীরে অফিসে গিয়ে সম্পত্তির সব প্রাসঙ্গিক রেকর্ড চেক করা উচিত।
-
ট্যাক্স রেকর্ড: জমির কর (খাজনা) রেকর্ড চেক করা উচিত।
-
বিল্ডিং পরিকল্পনা ও অনুমোদন: যদি জমিতে বিল্ডিং, ফ্ল্যাট বা অ্যাপার্টমেন্ট থাকে, তাহলে ক্রেতার বিল্ডিং পরিকল্পনা ও অনুমোদন পত্র সশরীরে যাচাই করা উচিত।