একটা লোক প্রতিদিন তার গাধার পিঠে মাল নিয়ে কাজে যায় আর পৌঁছানোর পর মাল নামিয়ে গাধাটিকে দড়ি দিয়ে একটি গাছে বেঁধে রাখে যেন গাধা পালিয়ে যেতে না পারে। এই কাজ সে রোজ করে, তবে মনের ভুলে একদিন লোকটি দড়ি বাড়িতে ভুলে রেখে এসেছে। এবার ভীষণ বিপদ। কোথাও কোন দড়ি পাওয়া গেলো না। খুব অসহায় হয়ে বসে ছিলো লোকটি। তখন এক পথিক তাকে নিকটে থাকা এক বুদ্ধিমান মানুষের ঠিকানা দিয়ে তার কাছে সাহায্য চাইতে বললো। কোন উপায় না পেয়ে লোকটি সেই বুদ্ধিমান মানুষটির কাছেই গেলো আর সাহায্য চাইলো। বুদ্ধিমান মানুষটি প্রথমে সব কিছু বিস্তারিত শুনলেন তার পর বললেন, “এতো খুবই সহজ কাজ। তুমি দড়ি দিয়ে গাধাটিকে যে ভাবে প্রতিদিন বেঁধে রাখতে ঠিক সেই গাছের কাছে গাধাটিকে বেঁধে রাখো তাহলেইতো হলো।”
লোকটি মুখ কালো করে বললো, “আপনাকেতো বললাম দড়িটা ভুলে রেখে এসেছি। তাহলে কীভাবে বাঁধবো।” বুদ্ধিমান লোকটি বললেন, “আমিতো তোমাকে দড়ি দিয়ে গাধাকে বাঁধতে বলি নাই”। লোকটি চমকে গেলো – “তাহলে কী দিয়ে বাঁধবো?” বুদ্ধিমান লোকটি বললেন, “কিছু দিয়েই বাঁধবে না। শুধু দড়ি দিয়ে বাঁধার অভিনয় করবে। দড়িযে নেই সেটা তুমিও জানো, আমিও জানি, কিন্তু গাধাতো গাধাই! ওতো জানে না। যা বলেছি করো।” লোকটি ভয়ে ভয়ে যেমন বলা হয়েছে তেমনই করলো। গাধাকে দড়ি দিয়ে বাঁধার মত অভিনয় করলো আর প্রতি দিন যেভাবে গাছের কাছে শব্দ করে গিট দিতো সেটাও দিলো। তার পর কাজে যাওয়ায় আগে গাধাকে একটা পিঠে হালকা আদর করতো সেটাও করলো।
লোকটি সারাদিন তার কাজ করলো এবং দিন শেষে ফেরার সময় তার মনে মনে ভয় হতে লাগলো গাধাটি হয়তো কোথাও পালিয়ে গেছে। গাধাকে না পেলে তার অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে। বুদ্ধিমান লোকটিও হয়তো বোকা ছিলো – ইত্যাদি ইত্যাদি চিন্তা তার মাথায় চলছিলো। কিন্তু গাছের কাছে এসে সে দেখলো গাধাটিকে ঠিক যেমন রেখে গিয়েছিলো তেমনই আছে। গাছ থেকে একটুও দূরে যায় নি। লোকটি প্রতিদিনের মতই গাধার পিঠে ফিরে যাওয়ার জন্য কিছু মাল রেখে গাধাকে টানতে শুরু করলো। কিন্তু আজব ঘটনা গাধা এক পাও সামনে গেলো না। অনেক টানা টানি করেও কোন লাভ হলো না। লোকটি ভাবলো গাধাটার কোন সমস্যা হয়েছে নাকি। সে গাধার সব জায়গায় দেখেও কোন সমস্যা খুঁজে পেলো না। কিন্তু গাধাও যাচ্ছেই না। নিরুপায় হয়ে লোকটি আবার সেই বুদ্ধিমান লোকটির কাছে গেলো আর সাহায্য চাইলো।
বুদ্ধিমান লোকটি জানতে চাইলেন, “কী সমস্যা হচ্ছে বিস্তারিত বলোতো”। বিস্তারিত বলার পরে বুদ্ধিমান লোকটি জিজ্ঞেস করলেন, “আচ্ছা তুমি কী গাধার দড়িটি খুলেছো? নাকি দড়ি না খুলেই গাধাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে চাচ্ছো?” লোকটি বললো, “দড়ি! কীসের দড়ি? কোন আসল দড়ি দিয়েতো ওকে বাঁধা হয় নি।” বুদ্ধিমান মানুষটি বললো, “তুমি গাধাকে এতোটাও গাধা মনে কোরো না। গাধা খুব ভালো করেই জানে গাছের সাথে বাঁধা খুঁটি না খুলে দিলে বাড়ি যাওয়া যাবে না। তাই সে যাচ্ছে না। এবার গিয়ে দড়িটা আগে খুলে দাও তার পর গাধাকে নিয়ে বাড়ি যাও”। লোকটি সত্যি সত্যি এবার গিয়ে গাধার সামনে গাছের কাছে গিয়ে দড়ি খোলার অভিনয় করলো। তারপর খুঁটি খোলা শেষে প্রতিদিনের মতোই গাধার পিঠে হাত দিয়ে একটু ধাক্কা দিলো। সাথে সাথে গাধা বাড়ির দিকে চলতে আরম্ভ করলো। অথচ একটু আগেই এই গাধা শত টানাটানি, ধাক্কাধাক্কিতেও যাচ্ছিলো না।
গল্প শেষ। এবার সত্যকে বোঝার পালা। এই গল্পের গাধাটা কিন্তু পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ যাদের মনের ভেতর খুঁটি বাঁধা আছে। মনের ভেতর খুঁটিগুলো বাঁধা থাকলে শত চেষ্টা করলেও সফলতা আসবে না। আপনাদের মধ্যে অনেকেই চায় পরীক্ষায় ১০০ তে ১০০ পেতে, কিন্তু মনের ভেতর নিজেই নিজেকে বলে ১০০ তো পাওয়া অসম্ভব! এই মনের ভেতর “অসম্ভব” শব্দটা একটা খুঁটি। অনেকেই চায় কোন পাহাড়ের সর্বোচ্চ উচ্চতায় পৌঁছাতে আর মনে মনে বলে এটা আমাকে দিয়ে হবে না। এই “আমাকে দিয়ে হবে না” আরেকটা খুঁটি। এই খুঁটিগুলোর জন্য আপনি কখনোই সফলতার পথে চলতে পারেন না। গাধা কেন বাড়ি যাচ্ছিলো না? কারণ ছিলো গাধার মনের খুঁটি এবং বাঁধন।
হাতির ছোট্ট বাচ্চাকে ছোট্টবেলায় পায়ে রিং লাগিয়ে বেঁধে রাখা হয়, যার জন্য ছোট্ট হাতি যখনই নিজের মতো কোথাও যেতে চায় তখনই পায়ে ব্যথা হয়। কিছু সময় পর সে বুঝতে পারে রিং মানেই বস – মানতে হবে। এই হাতি যখন বড় হয়ে যায়, তখন তার কাছে সামান্য রিং কোন রকম বাঁধাই হওয়ার কথা না। তবুও ছোট বয়সে বেঁধে দেওয়া রিং তার মনের মধ্যে বিরাট খুঁটি হয়ে যায়। সে বড় হয়ে পোষ মানে মানুষের। তাকে দিয়ে যা খুশি তাই খেলা দেখানো যায়। আপনাকে দিয়েও হয়ত অনেকেই খেলা দেখায় – সেটা আপনি হয়তো কখনো কখনো বুঝতে পারেন। কিন্তু মনের ভেতর খুঁটি আছে তাই কিছু করতে পারে না।
এবার খুঁটির সূত্রগুলো বলছি –
১. মনের ভেতর খুঁটি তৈরি করা যায়।
২. যার মনে খুঁটি আছে তাকে দিয়ে যা খুশি করানো যায়।
৩. যার খুঁটি নেই সে নিজেই নিজের মালিক।
সূত্র প্রয়োগ করে আপনি চাইলে কাউকে দিয়ে কিছু করিয়ে নিতে পারেন। শুধু আপনার জানতে হবে তার ভিতরে কীভাবে খুঁটি বাঁধা হয়েছে। আর নিজের ভেতরের খুঁটিগুলো ভেঙে ফেলতে পারেন, যেন কেউ আপনাকে ব্যবহার করতে না পারে। কোন খুঁটি আপনার সফলতাকে থামিয়ে রেখেছ সেটাও খুঁজে বের করতে পারেন। তবে কাজটা এতো সহজ না। মনের ভেতর কোন খুঁটি ভাঙতে কিছু সময়তো লাগবেই। তবে চেষ্টা করুন সফলতা আসবেই। তাহলে এখনই নিজের ছোট কোন খুঁটিকে ভেঙে বাঁধন খুলে দিন। আপনার জন্য রইলো শুভকামনা।
এইচ আর বি রঞ্জন একজন পুরপ্রকৌশলী এবং “মাই স্টাডি ফ্রেন্ড”-এর প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা।