back to top
9.8 C
New York
Sunday, November 24, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

খুলনার উপকূলে শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই সুপেয় পানির সংকট

বিশুদ্ধ পানি কিনতে দোকানে ক্রেতাদের লাইন। (ছবি: দ্যা মেট্রোপলিস)

রাশিদুল ইসলাম –

খুলনা জেলার দাকোপ উপজেলায় শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকেই দেখা দিয়েছে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। ফলে বিশুদ্ধ খোলা পানির দোকানেও পড়ছে দীর্ঘ লাইন। কিছু লোক আবার দূর-দূরান্ত থেকেও এই পানি সংগ্রহ করছেন । কেউ কেউ আবার  বাধ্য হয়ে ডোবা-নালার পানি খেয়ে ডায়রিয়া-সহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে ভুগছেন। সরেজমিন ঘুরে এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা  গেছে, সুন্দরবনের কোলঘেঁষা এই উপজেলা ৩টি পৃথক দ্বীপের সমন্বয়ে গঠিত। এর চারপাশে নদীতে লবণপানির প্রচণ্ড চাপ থাকায় খরা মৌসুমে সুপেয় পানির তীব্র সংকট দেখা দেয়। প্রতি বছরের মতো এবারও ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নের সর্বত্রই সুপেয় পানির মারাত্মক সংকট দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে এই অঞ্চলের দুই লাখেরও বেশি মানুষ সুপেয় পানির জন্য হা-হুতাশ করছেন। এমনকি চায়ের দোকান, খাবার হোটেলেও ক্রেতাকে বিশুদ্ধ পানি দিতে না পেরে দোকানদাররা দিশেহারা হয়ে পড়ছেন। চলতি রবি মৌসুমে এ অঞ্চলের প্রধান ফসল তরমুজ, বোরো প্রভৃতি খেতেও সেচ দিতে না পারায় ফলন ভালো না হওয়ার কারণে অনেক কৃষক লোকসানের শিকার। এখানে কোথাও গভীর নলকূপ স্থাপন সফল না হওয়ায় রয়েছে অগভীর নলকূপ, যার অধিকাংশই অকেজো। আবার কোনো কোনো নলকূপের পানিতে লবণ, আর্সেনিক এবং আয়রনের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত। 

এছাড়া এ অঞ্চলে পর্যাপ্ত রেইন ওয়াটারও নেই। যে কারণে এলাকার মানুষের খাওয়ার পানির একমাত্র ব্যবস্থা — পুকুরের পানি ফিল্টার করে পান করা।  কিন্তু প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল পুকুরগুলোতে পানি স্বল্পতার কারণে প্রায় সকল পন্ড স্যান্ড ফিল্টার বা পিএসএফ অকেজো হয়ে পড়েছে। এলাকার কতিপয় সচ্ছল ব্যক্তিরা বটিয়াঘাটা, খুলনা-সহ বাহিরের বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি কিনে জীবনধারণ করছেন। আর মধ্যবিত্ত এবং নিম্নআয়ের মানুষ বাধ্য হয়ে জীবন বাঁচাতে যে পুকুরে পানি আছে, সেখান থেকে সরাসরি পানি নিয়ে পান করছেন। ফলে বিশুদ্ধ পানির তীব্র অভাবের কারণে এই বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে একপ্রকারের বাধ্য হয়েই অস্বাস্থ্যকর ও খাওয়ার অনুপযোগী পানি পান করে জীবনধারণ করতে হচ্ছে। এতে অনেকেই ডায়রিয়া-সহ নানান পানিবাহিত রোগে ভুগছেন বলে জানা গিয়েছে।  

কালাবগি এলাকার ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য নিমাই মন্ডল-সহ আরও অনেকে জানান, প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার পথ নৌকায় যাওয়া-আসা করে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়ন কৈলাশগঞ্জ এলাকা থেকে অনেক কষ্টে বিশুদ্ধ পানি পান করতে হচ্ছে। আর যাদের অবস্থা ভালো ও টাকাপয়সা আছে তারা বাহির থেকে পানি কিনে আনেন। আবার এলাকার কিছু অসহায়-গরিব মানুষ সরাসরি পুকুরের অবিশুদ্ধ পানি পান করছেন বলে তিনি জানান। 

চালনা বাজারের হোটেল ব্যাবসায়ী সমরেশ মণ্ডল  বলেন, পানিসংকটের কারণে খরিদ্দারদের পানি দিতে পারছি না। পুকুরের পানি খাওয়ার অনুপযোগী হওয়ায় তা দিয়ে প্লেট ধোয়ার কাজ চলছে আর খরিদ্দারদের বেশি দামে প্রতি লিটার পানি কিনে খেতে দিতে হচ্ছে। চা-দোকানদার মিলন মল্লিকও একই অভিমত ব্যক্ত করেন। চালনা পৌরসভার প্যানেল মেয়র মেহেদী হাসান বুলবুল বলেন, সুপেয় পানিসংকট নিরসনে এ পৌরসভায় পানির প্রকল্পের আওতায় একটি পানি বিশুদ্ধকরণ প্ল্যান্টের কাজ শেষ হয়েছে। একইসাথে, পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় বাড়ি বাড়ি পাইপ লাইনের কাজও শেষ হয়েছে। বর্তমানে সেটির পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে আর এই কাজ সম্পন্ন হলেই পৌর এলাকায় সুপেয় পানিসংকট অনেকটা নিরসন হবে বলে মনে করেন তিনি। 

এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলার উপ-সহকারী জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ জানান, বর্তমানে এখানে সুপেয় পানির আধারের মধ্যে ২৬৬৮টি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংকি), ২৭টি গভীর নলকূপ, ৫০০টি অগভীর নলকূপ সচল রয়েছে। এছাড়া সমগ্র দেশে নিরাপদ পানি সরবরাহ প্রকল্পের ২৩৪টি ও উপকূলীয় জেলাসমূহে বৃষ্টির পানি সরবরাহ প্রকল্পের ৮৩৩টি ট্যাংকি, কমিউনিটি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং ২১টি, ১৮টি পন্ড আল্টা ফিল্টার, আরও প্লান্ট ২টি ও ১৫টি ভ্যাসেল টাইপ পিএসএফের কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া কয়েকটি এনজিও কিছু পানির ট্যাংকি ও কয়েকটি পানি-বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট নির্মাণ করলেও প্রয়োজনের তুলনায় তা অপ্রতুল। এই উপজেলার অধিকাংশ মানুষ নিরাপদ সুপেয় পানির জন্য রেইন ওয়াটার হারভেস্টিংয়ের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু মার্চ থেকে মে মাস পর্যন্ত প্রচণ্ড দাবদাহ এবং খরার কারণে পানির চাহিদা থাকে প্রচুর। এ অঞ্চলের অন্যতম প্রধান ফসল তরমুজ চাষের সময়ও ব্যাপক পানির সংকট দেখা দেয়। উক্ত সময়ের জন্য ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে পুকুর, দিঘি খনন করা প্রয়োজন। এছাড়াও বিভিন্ন খাল খননের মাধ্যমে কৃষি জমিতে সেচের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পানিসংকট সমাধানের জন্য এ অঞ্চলে আরও অনেক বেশি রেইন ওয়াটার হারভেস্টিং (ট্যাংকি) ও পুকুর খনন করা দরকার। একইসাথে, পানির জন্য বিশেষ প্রকল্পও গ্রহণ করতে হবে।

এ ব্যাপারে দাকোপ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মুনসুর আলী খান বলেন, এ উপজেলায় সুপেয় পানির সংকট রয়েছে। সে কারণে উপজেলা পরিষদ থেকে হতদরিদ্র পরিবারের জন্য পানির ট্যাংকি বিতরণ করার জন্য একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। পাশাপাশি যেসকল এলাকায় মজা পুকুর ও খালে পানি নেই, তা সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ।

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles