back to top
21.9 C
New York
Tuesday, July 2, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে নেকটারের ভূমিকা

ছবি: মেট্রোপলিস-


মাসুম হোসেন –


দেশে আইসিটি অঙ্গনে দক্ষ জনগোষ্ঠী গড়ে তুলতে গবেষণা, শিক্ষা প্রশিক্ষণ  কার্যক্রম পরিচালনা করছে নেকটার। এর মাধ্যমে দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের অবদান রাখছে এই প্রতিষ্ঠান। ফলে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। শুধু তাই নয়, নেকটার দক্ষ কম্পিউটার শিক্ষক তৈরীর মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের উপযোগী জনশক্তি গড়ে তুলছে। একই সঙ্গে স্কুলকলেজের শিক্ষার্থীরাও নেকটার থেকে পাচ্ছে প্রশিক্ষণ।

 

সামনে এমন এক সময় আসবে, যখন নিত্যদিনের যাবতীয় কাজ মানুষকে আর করতে হবে না। সবকিছুই করবে রোবট। দেশে চতুর্থ বিপ্লবের ছোঁয়ায় পাল্টে যাবে উৎপাদন ব্যবস্থা। কম সময়ে উৎপাদন হবে বিপুল পণ্য। তবে শ্রমিক হিসেবে মানুষ নয়, কাজ করবে তখন রোবট। কৃষি থেকে শুরু করে চিকিৎসা, যোগাযোগ, প্রকাশনাসহ সব ক্ষেত্রেই ঘটবে এমন পরিবর্তন। এমনকি ঘরের কাজও রোবট দিয়ে করানো হবে।

 

চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার জন্য আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলেই দেশের সকল খাতেই ঘটবে পরিবর্তন। তবে সময় বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী চাকরি হারাবে। এতে আশঙ্কার কিছু নেই। কারণ তখন তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্রের। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব হলো আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলমান উৎপাদন এবং শিল্প ব্যবস্থার স্বয়ংক্রিয়করণ। এর মাধ্যমে ইন্টারনেট অব থিংকিং (আইওটি) কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার মানবসম্পদের বিকল্প হিসেবে কাজ করবে। 

 

ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণে কাজ করছে জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গবেষণা একাডেমি (নেকটার) ১৯৮৪ সালে সরকারিভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয় বহুভাষী সাঁটলিপি প্রশিক্ষণ গবেষণা একাডেমী (নট্রামস) পরবর্তীতে নট্রামস বিলুপ্ত করে ২০০৫ সালে নেকটার নামে একাডেমী প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১৬ সালের ডিসেম্বর থেকে এই প্রতিষ্ঠান কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই প্রতিষ্ঠানটিতে যাবৎ প্রশাসন, জুডিশিয়াল, পুলিশ এবং অডিট অ্যান্ড একাউন্টস ক্যাডার শিক্ষকশিক্ষার্থীরা বিভিন্ন মেয়াদে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। 

 

এখন পর্যন্ত দেশের শিক্ষিত বেকার যুবক যুব মহিলাসহ স্কুলকলেজের শিক্ষক এবং সরকারিবেসরকারি প্রতিষ্ঠানের ৫৭ হাজার ৫৭১ জন কর্মকর্তা কর্মচারী নেকটার থেকে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এরমধ্যে প্রতিষ্ঠানটির দুই বছর মেয়াদি ডিপ্লোমাইনকমার্স ডিপ্লোমাইন বিজনেজ স্টাডিজ, দুই বছর মেয়াদি এইচএসসি (ব্যবসায় ব্যবস্থাপনা) মাধ্যমিক স্কুল শিক্ষক (প্রকল্পবিহীন) কম্পিউটার প্রশিক্ষণসহ নানা কোর্স রয়েছে।

 

নেকটারের তথ্যমতে, দেশে বর্তমানে তরুণের সংখ্যা প্রায় চার কোটি ৭৬ লাখ। যা মোট জনসংখ্যার শতকরা ৩০ ভাগ। আগামী ৩০ বছর ধরে তরুণ বা উৎপাদনশীল জনগোষ্ঠী সংখ্যা গরিষ্ঠ থাকবে। বাংলাদেশের জন্য চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার জন্য তরুণরাই সবচাইতে বড় ভূমিকা পালন করবেন। তবে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের ফলে বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী চাকরি হারাবে। কিন্তু এতে আশঙ্কার কিছু নেই। কারণ তৈরি হবে নতুন নতুন কর্মক্ষেত্র। সেই লক্ষ্যে বর্তমান সরকার ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে। এই শিল্প বিপ্লব ঘটলে কম্পিউটারের যন্ত্রাংশ তৈরি অ্যাসেম্বলিং, সফটওয়্যার তৈরি এবং ডাটা প্রসেসিং কাজে দেশের লাখ লাখ মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। আইসিটি সফটওয়্যার শিল্প রফতানি খাতকে আরো সমৃদ্ধ করবে। 

 

রোবটের ব্যবহারে অপচয় রোধ

সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাবে কৃষিসহ শিল্প কারখানায় পণ্য উৎপাদনে বর্তমানে অনেক সম্পদের অপচয় হয়। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে জমিতে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি সার, পানি, রোগ ক্ষতিকর পোঁকামাকড় নিয়ন্ত্রণে ওষুধ প্রয়োগ করা হচ্ছে। কারণ জমিতে সেগুলো কী পরিমাণ প্রয়োজন তা কৃষক বা শ্রমিক বুঝতে পারেন না। কিন্তু একই কাজ যদি রোবট দিয়ে করানো হয়, সেক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত কোনো কিছুই ব্যবহার হবে না। এতে দেশের সম্পদের অপচয় রোধ হবে। ফসলি জমির কখন, কোথায়, কী, কতটুকু প্রয়োজন তা বুঝতে পারবে রোবট। সেই হিসেবে পানি সারসহ প্রয়োজনীয় যেকোনো কিছু প্রয়োগ করবে। এছাড়াও শিল্প কারখানায় পণ্য তৈরিতে বিভিন্ন কারণে শ্রমিকরা কাঁচামালের অপচয় করে থাকেন। কিন্তু রোবটের কারণে সম্পদের অপচয় রোধ হবে। সম্পদের অপচয় রোধ হলে কৃষক ব্যবসায়ীদের আয় বাড়বে। একইসঙ্গে সবদিক থেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ থাকবে দেশ।

 

গবেষণা কার্যক্রম

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ আত্মকর্মসংস্থান উপযোগী জনশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করছে নেকটার। আইসিটি বিষয়ে প্রশিক্ষণ গবেষণা মাধ্যমে ভিশন ২০৪১ বাস্তবায়ন  করা নেকটারের লক্ষ্য। নেকটার পরিচালিত গবেষণা কার্যক্রমগুলো হলো 

 

দক্ষতা বৃদ্ধি উদ্যোক্তা সৃষ্টিতে জাতীয় কম্পিউটার প্রশিক্ষণ গবেষণা একাডেমীর  নেকটাঅবদান। ৩০ দিন মেয়াদী শিক্ষক প্রশিক্ষণ কোর্সের প্রশিক্ষণ মূল্যায়ণ। নেকটার এবং অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালিত আইসিটি ট্রেনিংয়ের শ্রমবাজার চ্যালেঞ্জ ভিত্তিক তুলনামূলক বিশ্লেষণ। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে আইওটি, ন্যাচারাল ল্যাংগুয়েজ প্রসেসিং, ব্লকচেইন, মেশিন লার্নিংডাটা মাইনিং, ডীপ লার্নিং, বায়োইনফরমেটিক্স, বায়ো মেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং।

 

চলমাস কোর্স

নেকটারে বর্তমানে ২৫টি কোর্স চলমান আছে। এই কোর্সগুলোর মধ্যে রয়েছে অ্যাডভান্সড সার্টিফিকেট কোর্স অন কম্পিউটার ট্রেনিং ( মাস মেয়াদি), তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ক শিক্ষক প্রশিক্ষণ, ডিজিটাল কনটেন্ট ডেভেলপমেন্ট, নির্বাচিত মাদ্রাসাগুলোর উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের শিক্ষক প্রশিক্ষণ, গ্রাফিক্স ডিজাইন, ডিজিটাল মার্কেটিং, ওয়ার্ডপ্রেস থিম কাস্টমাইজেশন, ওয়েব ডিজাইন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (পিএইচপি, মাইএসকিউএল), ভিডিও এডিটিং

 

নেকটারের প্রাপ্তি স্বীকৃতি

সম্প্রতি সিসকো অ্যাওয়ার্ড (এ্যাপ্রিসিয়েশন ফর দ্য কনট্রিবিউশন মেড টু নেটওয়ার্কিং ইন সিসকো নেটওয়ার্কিং একাডেমী প্রোগ্রাম বাংলাদেশ২০২২) অর্জন করে নেকটার। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্টার্ড ট্রেনিং অর্গানাইজার (আরটিও) স্বীকৃতিও পেয়েছে। এছাড়াও জাতীয় দক্ষতা উন্নয়ন কতৃপক্ষের স্ট্যান্ডার্ড ট্রেনিং পোভাইডার (এসটিপি) হিসেবেও স্বীকৃতি পেয়েছে নেকটার।

 

নেকটারের পরিচালক (উপসচিব) মো. শাফিউল ইসলাম বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তি খাতে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। দেশে তরুণদের হাতে হাতে এখন স্মার্টফোন। একই সঙ্গে বাড়ছে ইন্টারনেট ব্যবহার। তাদের দক্ষ জনগোষ্ঠী হিসেবে গড়ে তুলতে গবেষণা, শিক্ষা প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে।

 

তিনি আরও বলেন, ‘তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারে দ্রুত বদলে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন খাত। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সুফল ভোগ করার জন্য তরুণরাই সবচাইতে বড় শক্তি। তাদের উৎসাহিত করার লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।

 

মো. শাফিউল ইসলাম আরও বলেন, ‘কৃষি, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে আধুনিক স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু হলে দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটবে। নেকটার দক্ষ কম্পিউটার শিক্ষক তৈরীর মাধ্যমে আত্মকর্মসংস্থানের উপযোগী জনশক্তি গড়ে তুলছে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles