ছবিঃ অনন্যা সালাম সমতা –
Previous
Next
মোঃ আশিকুর রহমান তালুকদার নিবিড় –
কিছু কিছু দিনকে ঘিরে খুব ছোটবেলা থেকেই প্রায় সবার অনেক আগ্রহ-উদ্দীপনা-স্বপ্ন থাকে। কত শত স্বপ্ন কত রঙয়ের আলপনা আকাঁ হয় এই রকম দিনকে ঘিরে। অগণিতবার অজস্রবার রঙ-তুলির আঁচড় পড়ে এই দিনকে নিয়ে ক্যানভাসের গায়ে। কনভোকেশন বা সমাবর্তনের দিনটিও ঠিক তেমনই প্রতিটা শিক্ষার্থীর জীবনে।
গাউন-টুপি পরে গ্র্যাজুয়েট হওয়ার স্বপ্নবোনা আর প্রস্তুতি নেয়া শুরু হয় সেই কৈশোরের কোন এক ছোট্ট বিকাল থেকে। সেই প্রস্তুতিটাই যেন বাস্তবে পা ছোঁবে আজ আর কাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আঙিনা জুড়ে।
এই স্বপ্ন ছোঁয়ার কথা বলতে গিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের ১০ম ব্যাচের দর্শন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট মোঃ সাকের উদ্দিন আরিফ বলেন, “শিক্ষা জীবনের স্বীকৃতি স্বরূপ সমাবর্তন হলো একটি আমার কাছে একটি আবেগের নাম। শিক্ষা জীবন শেষ করে বহুল প্রতিক্ষীত দিনটির জন্য অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। সকাল থেকে লাইনে দাড়িয়ে সমাবর্তনের কস্টিউম সংগ্রহ করে যখন হাতে পেয়েছি তখন আবেগ আপ্লুত হয়েছি। আমি বোধহয় এইদিনটির জন্যই অপেক্ষা করেছিলাম। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কিছু জিনিস দৃষ্টিকটু মনে হলেও সব মিলিয়ে খারাপ লাগছে না, বরং আনন্দই লাগছে।”
শীত শীত সকালে কিংবা মিষ্টি রোদেলা বিকালে কার্জন কিংবা কলা ভবনের ইতিহাসময় আঙিনা সাক্ষী হবে এই নব্য গ্রাজুয়েটদের ছায়ার। কারো কারো সাথে বাবা-মা আসবে, কারো কারো সাথে ভাই-বোন কিংবা প্রিয়জন। তাদের সব ত্যাগ, কষ্ট আজ আর কাল চোখের মণিতে সার্থকতার গান হয়ে ভেসে উঠবে।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের ২০১৬-১৭ সেশনের কে ৭৪ ব্যাচের ছাত্রী অনন্যা সালাম সমতা আজকের এই উৎসবে একাত্ম হয়ে জানান, “এক কালোর সাথে এত বিভিন্ন রঙের মিশেল সামনাসামনি কখনো দেখিনি আগে, ভিন্ন ভিন্ন ডিপার্টমেন্ট, ভিন্ন ফ্যাকাল্টি, ভিন্ন ভিন্ন রঙ, কিন্ত সবাই একসাথে একই কস্টিউম কালোতে – কোথায় যেন ভীষণ মিল! সাদাতে রঙ মেশানো যায় জানতাম, কালোতেও যে এত সুন্দর রঙ মেশানো যায় আবার ঐক্যও আনা যায়, সমাবর্তন দেখেই মনে আসলো।”
কলাভবন, কার্জন, ভিসি চত্ত্বর, কিংবা টি এস সি নামক স্মৃতি তৈরির সেলগুলো সব আজ লোকে লোকারণ্য। শীতের উদাসী রোদে ঘুরে বেড়াচ্ছে হাসিমাথা গ্রাজুয়েটরা। এই দৃশ্যের দেখা মেলবে আজ আর কাল দুদিনই। শনিবার মূল অনুষ্ঠান।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আইন বিভাগের ছাত্রী ইশরাত জাহান বুশরা বলেন, “আজকে ক্যাম্পাসে এসে চারদিকে গাউন-হ্যাট পরা মানুষ দেখে মন ভালো হয়ে গেছে। অন্যান্য বছরও সমাবর্তন দেখলে ভালো লাগে, কিন্তু এবার নিজের বলেই হয়তো ভালো লাগাটা আরও বেশি। যখন ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার জন্য এই ক্যাম্পাসে প্রথমবার আসি তখন পরিচিত মানুষদের সমাবর্তনের ছবিগুলো অনুপ্রেরণা ছিলো। অনেকটা এই গাউন পরার জন্য হলেও চান্স পেতে হবে এমন চিন্তাভাবনা। যদিও আগের সেই উৎসাহ বা আগ্রহ সময়ের সাথে সাথে অনেকটাই হারিয়ে গেছে, কিন্তু আজকে অনেক চেনা-অচেনা মানুষের ভিড়ে তার কিছুটা হলেও ফিরে পেলাম।”
আজকের তোলা এসব ছবি বেঁচে থাকবে আজীবন। আজকের নব্য গ্র্যাজুয়েট ভবিষ্যতে কোন এক নস্টালজিক রাতে হয়ত এই ছবি দেখাবে তার নাতি-নাতনীদের। হয়ত গল্প বলবে আজকের দিনটার। যতবার বলবে ততবারই নতুন নতুন রঙ এসে জড়ো হবে আজকের তৈরি এই অতীতের রঙ্গিন স্মৃতি।