Previous
Next
মোঃ আশিকুর রহমান তালুকদার নিবিড় –
কিছু কিছু দিন থাকে স্মৃতির পাতায় কখনো মলিন হয় না, শীতের রুক্ষ পাতার মতন ঝরে যায়না। মন বারে বারে চিরবসন্তের মতন সবুজ, সতেজ, নির্মল করে রাখে। প্রতিটা শিক্ষার্থীর জীবনেই সমাবর্তনের দিনটা এমনই।
ক্যাম্পাস ঘিরে সাজ সাজ রবের মধ্য দিয়ে গত ১৯ নভেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়ে গেল ৫৩ তম সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠান। এবার সমাবর্তনে ৩০ হাজারের বেশি গ্র্যাজুয়েট ও গবেষক অংশগ্রহণ করেছেন।
এদের মধ্যে মোট ২২ হাজার ২৮৭ জন গ্র্যাজুয়েট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠ ভেন্যুতে মূল অনুষ্ঠানে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। আর অধিভুক্ত ৭ কলেজের ৭ হাজার ৭৯৬ জন গ্র্যাজুয়েট ঢাকা কলেজ ও ইডেন কলেজ ভেন্যু থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সমাবর্তনের মূল অনুষ্ঠানে যুক্ত ছিলেন।
এবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে ১৩১ জন কৃতী শিক্ষক, গবেষক ও শিক্ষার্থীকে ১৫৩টি স্বর্ণপদক, ৯৭ জনকে পিএইচডি, ২ জনকে ডিবিএ এবং ৩৫ জনকে এমফিল ডিগ্রি প্রদান করা হয়।
সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। আর সমাবর্তন বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ড. জঁ তিরোল।
সমাবর্তন উপলক্ষে গত ১৬ নভেম্বর থেকেই কাল গাউন আর টুপি গায়ে জড়িয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায়, নিজ নিজ ডিপার্টমেন্টে ঘুরে ঘুরে স্মৃতিচারণ করেছেন শিক্ষার্থীরা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের ১০ম ব্যাচের দর্শন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট মোঃ সাকের উদ্দিন আরিফ বলেন, “সমাবর্তনের সমাপনী দিনে আমার অনূভুতি অন্যদের চেয়ে আলাদা কিছু ছিলোনা। সবারই সম্ভবত মোটামুটি একই অনুভূতি ছিলো। সকাল থেকে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম কখন অনুষ্ঠানে যোগ দিবো।তাই আগে আগে বের হয়ে বন্ধুদের সাথে ছবি তোলার পর্ব সেরে নিলাম। তারপর বন্ধুদের নিয়ে মূল অনুষ্ঠানে যোগ দিলাম। সেখান থেকে বের হয়ে কষ্টিউম জমা দিয়ে ব্যাগ, স্যুভেনির নিয়ে তারপর হলে এসে মূল সার্টিফিকেট উত্তোলনের মাধ্যমে আমার অনার্স জীবনের ইতি টানলাম। দিনটি সত্যিই সুন্দর ছিলো। স্মৃতির পাতায় যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন অমলিন হয়ে থাকবে।বন্ধুবান্ধবরা দূরে থাকলেও স্মৃতিগুলো দূরে থাকবে না।খুব করে চাই এমন একটা দিন বারবার ফিরে আসুক।”
সমাবর্তন নেয়ার সময় কেউ ছিলেন বিবাহিত, কেউবা অবিবাহিত, আবার কেউ কেউ ইতোমধ্যে মা-বাবা হয়েছেন, কেউ চাকরিরত, আবার কেউ চাকরির প্রচেষ্টারত – তবে এই দিনগুলোতে সবাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গর্বিত গ্র্যাজুয়েট, এই পরিচয়েই যেন পরিচিত।
উচ্ছাসটা শুধু যারা সমাবর্তন নিচ্ছিলেন শুধু তাদেরই না, বরং গোটা পরিবারের জন্যও ছিল অনেক স্মৃতির মুহূর্ত। কারও কারও মা-বাবাও এই বিশ্ববিদ্যালয়েরই প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন যেখানে থেকে তাদের সন্তান সমাবর্তনে অংশ নিচ্ছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৫-১৬ সেশনের আইন বিভাগের গ্র্যাজুয়েট ইশরাত জাহান বুশরা নিজের অনুভূতির কথা জানাতে গিয়ে বলেন, “গ্র্যাজুয়েট মা-বাবা তাদের সন্তানদের হ্যাট পরাচ্ছে, আবার সন্তানরা মা-বাবাকে পরিয়ে দিচ্ছে। অনেক যুগলও একই সাথে সমাবর্তনে অংশ নিতে পেরেছে। নিশ্চয়ই তাদের অনুভূতিতে অন্যরকম ভাল লাগার ক্ষণ এটি। অন্যান্যদের জীবনসঙ্গীরাও বাদ যায়নি প্রিয়জনের এই আনন্দ আর গৌরবের মুহূর্তে অংশ নিতে। নিজের এই সামান্য অর্জনে কাছের মানুষদের এই উচ্ছাসটুকুই একে করে তুলেছে অসামান্য।”
এছাড়াও এবারের সমাবর্তনে স্ত্রীর সাথে কনভোকেশন এ গিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন প্রকৌশলী সামিউল আরেফিন – “সাড়ে তিন বছর আগে সমাবর্তন পেয়েছিলাম। বুয়েট থেকে বের হয়ে দ্রুত সমাবর্তন পাওয়া কিছুটা দূর্লভ ঘটনা বটে, তাই এর সাক্ষী হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছিলাম। সেই সাথে মহামান্য রাষ্ট্রপতির রসবোধ সমাবর্তন অনুষ্ঠানে নতুন মাত্রা যোগ করে। আর সমাবর্তনের আগের দিন পরিবার, বন্ধু-বান্ধব সহ কাছের মানুষদের নিয়ে মুহূর্তগুলো ফ্রেমবন্দী করে রাখতে পেরেছিলাম যে অনুভূতি কখনোই ভোলার নয়। আজ প্রেয়সীর সমাবর্তনে সেই স্মৃতিগুলো একটু একটু মনে পড়ে যাচ্ছে। তার এই আনন্দময় মুহূর্তগুলো নির্মলভাবে উপভোগ করছি। এইতো সাড়ে তিন বছর আগে আমিও তো ঠিক এ জায়টগাটাতেই ছিলাম হয়ত একই অভিব্যক্তি নিয়ে। ওর সাথে আমিও ভাগীদার হয়ে লুফে নিলাম সেই আনন্দের অনেকটা। সময়ের ঘূর্ণনে দুই ধরনের অভিজ্ঞতা আস্বাদন করে আমি আজ ধন্য বটে!”
সমাবর্তন বা গ্র্যাজুয়েশনের পর থেকে শুরু হয় একাকি পথচলা। ক্যাম্পাসের চেনাজানা মুখগুলোকে আর খুঁজে পাওয়া যায়না সে চারপাশের চেনাজানা চায়ের কাপ কিংবা আঙিনায়। এই সময়েই মানুষ পদার্পণ করে জীবনের প্রকৃত চ্যালেঞ্জের মোহনায়।