ছবিঃ সংগ্রহ
নওশিন ইয়াসমিন –
মুসলমানদের কাছে পবিত্র স্থানগুলোর মধ্যে মসজিদ অন্যতম। এদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে আছে অনেক মসজিদ। তাদের মধ্যে একটি হলো বিবিচিনি শাহী মসজিদ। বরিশাল বিভাগের বরগুনা জেলার বেতাগী উপজেলার বিবিচিনি গ্রামে অবস্থিত বিবিচিনি শাহী মসজিদ। লোকমুখে প্রচারিত আছে, এই মসজিদ কে ঘিরেই এদেশের উপকূলীয় এলাকায় শুরু হয় ইসলাম প্রচারের কাজ।
প্রায় সাড়ে তিনশত বছরের পুরনো এই মসজিদটি আকারে বড় না হলেও স্থাপত্যশৈলীতে বেশ রাজকীয়। জানা যায়, সম্রাট শাজাহানের সময় সূদুর পারস্য থেকে ইসলাম প্রচারের জন্য শাহ নেয়ামত উল্লাহ দিল্লিতে আসেন। ওই সময় দিল্লির সম্রাট শাহজাহানের দ্বিতীয় ছেলে বাংলার সুবাদার শাহ সুজা তার কাছে শিষ্যত্ব গ্রহন করেন। ১৬৫৯ খ্রিস্টাব্দের শেষের দিকে ইসলাম প্রচারের জন্য শাহ নেয়ামত উল্লাহ ও তার শিষ্যদের নিয়ে বজরায় চড়ে গঙ্গা নদী অতিক্রম করে বিষখালী নদীতে পৌছান। তখন শাহ সুজার অনুরোধে গ্রামে এক গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণ করেন। শাহ নেয়ামত উল্লাহর দুই কন্যা চিনিবিবি ও ইসাবিবির নামানুসারে গ্রামটির নাম বিবিচিনি গ্রাম ও তার সাথে মিলিয়ে মসজিদের নামকরন করা হয়। আরও জানা যায়, শাহ নেয়ামত উল্লাহর নামের সাথে মিল রেখে বিবিচিনি গ্রামের পাশের গ্রামের নাম রাখা হয় নেয়ামতি।
মুঘল আমলের এই মসজিদটির দৈর্ঘ ৩৩ ফুট, প্রস্থ ৩৩ ফুট এবং দেওয়াল ৬ ফুট চওড়া। স্থাপ্যত্যরীতি মেনে নির্মিত মসজিদটির উচ্চতা প্রায় ২৫ ফুট। প্রাচীন এই মসজিদটির দক্ষিণ ও উত্তর দিকে ৩ টি দরজা আছে। জাফারি ইটের তৈরি এই মসজিদটি মাটি থেকে প্রায় ৩০ ফুট উঁচু টিলার ওপর অবস্থিত। ১৭০০ সালে শাহ নেয়ামত উল্লাহর মৃত্যুর পর তাকে মসজিদের পাশে সমাহিত করা হয়। বিবিচিনি শাহী মসজিদের পাশে প্রায় ১৫ হাত লম্বা ৩ টি কবর রয়েছে। এলাকাবাসীর মতে, এই ৩টি কবরগুলো হলো শাহ নেয়ামত উল্লাহ এবং তার ২ কন্যার।
১৯৮৫ সালে বেতাগী উপজেলার প্রশাসন মসজিদটি প্রথম সংস্কার করেন। এরপর ১৯৯২ সালে প্রত্নতত্ত বিভাগ মসজিদটির রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কারের দ্বায়িত্ব গ্রহণ করেন এবং এটিকে প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান হিসাবে তালিকাভুক্ত করেন। বর্তমানে বিবিচিনি মসজিদটি প্রত্নতত্ত অধিদপ্তরের তালিকাভুক্ত এবং পরবর্তীতে কয়েক ধাপে মসজিদটি সংস্কার করা হয়।
ঢাকা থেকে বিবিচিনি শাহী মসজিদ যাবার জন্য প্রথমে বরগুনা শহরে আসতে হবে। ঢাকার সায়েদাবাদ ও গাবতলী থেকে বরগুনায় সরাসরি চলাচলকারি বাস পাওয়া যায়। যেগুলোর মধ্যে আব্দুল্লাহ পরিবহন, দ্রুতি পরিবহন এবং শাকুরা পরিবহনের ভাড়া ৫০০-৭০০ টাকার মধ্যে। আবার চাইলে লঞ্চে করেও যাওয়া যেতে পারে। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল থেকে বেশ কিছু সরাসরি ও লোকাল লঞ্চ বরগুনার উদ্দেশ্যে যাতায়াত করে। লঞ্চ ছাড়ার সময় বিকাল ৫-৬ টার মধ্যে। এইসব লঞ্চের ডেকের ভাড়া ২৫০-৩০০ টাকা আর সিঙ্গেল কেবিনের ভাড়া ৮০০-১০০০ টাকা। বরগুনায় নামার পরে বেতাগি যাওয়ার জন্য বাস, মোটর সাইকেল, রিক্সা ভাড়া পাওয়া যায়। থাকার জন্য বরগুনা সদরই উপযুক্ত কারন সেখানে রেস্ট হাউজ ও বেশ কিছু আবাসিক হোটেল রয়েছে।