back to top
4.7 C
New York
Saturday, December 28, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে বাড়ছে ব্যয়

ছবিঃ সংগ্রহীত-

মাসুম হোসেন-

দেশের উত্তরের জেলাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তন ও অপরিকল্পিতভাবে পানি উত্তোলনসহ নানা কারণে পানির স্তর নামছে। বৈ‌শ্বিক উষ্ণায়ণের ফলে বৃ‌ষ্টিপাতের সময় বিস্তার কমে গেছে। আগে যে প‌রিমাণ বৃ‌ষ্টি তিন থেকে চার মাসে হতো, তা এখন হচ্ছে  একমাস বা তারও কম সময়ে। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির রিচার্জের সময় ব্যাপ্তিও কমে এসেছে। একই সঙ্গে ভূ-উপরিস্থ পানিও কমছে। শুকিয়ে যাচ্ছে নদী, নালা, খাল-বিল। ফলে ব্যয় বেড়েছে ভূগর্ভস্থ পানি প্রাপ্তিতে। এতে সামনের দিনগুলোতে বড় ধরণের বিপর্যয়ের মধ্যে পড়তে যাচ্ছেন এ অঞ্চলের বাসিন্দারা। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নানা কারণে দেশে ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার বেড়ে গেছে। ভূপৃষ্ঠের ও ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহারের ক্ষেত্রে সবসময়ই হিসাব-নিকেষ করে সুষ্ঠু পরিকল্পনা করা প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার তা পর্যবেক্ষণ করার বিষয়ে কোন নীতিমালা গ্রহণ করেননি। এখানেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) তথ্যমতে, উত্তরের বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, রংপুর ও জয়পুরহাটে দশ বছরের ব্যবধানে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কিছুটা নিচে নেমে গেছে। এই জেলাগুলোতে ভূগর্ভস্থ পানি বর্তমানে ১৫-৬০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। 

কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ায় কৃষি খাতে বিদ্যুৎ বা জ্বালানী অপচয় বৃদ্ধি পেয়েছে। ধীরে ধীরে কৃষিজমি মরুকরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এতে দেশে ফলের উৎপাদনও কমছে।

কৃষকরা বলছেন, পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষি জমিতে সেচের খরচ অনেক বেড়ে গেছে। এখন অধিক ক্ষমতাসম্পন্ন পাম্প দিয়ে পানি তুলতে হয়। এতে অতিরিক্ত জ্বালানি তেল বা বিদ্যুৎ ব্যবহৃত হয়। যার ফলে দিন দিন কৃষিতে উৎপাদন খরচ বেড়েই চলেছে।

বিএমডিএর বগুড়ার সহকারী প্রকৌশলী এস এম মিজানুর রহমান বলেন, বগুড়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর বর্তমানে সর্বোচ্চ ২৮ ফুট নিচে অবস্থান করছে। এক যুগের ব্যবধানে পানির স্তর এক থেকে দেড় ফুট নেমে গেছে। তবে বৃষ্টিপাত বেশি হলে পানির স্তর ফের স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে যায়।

বিএমডিএর নাটোরের নির্বাহী প্রকৌশলী মনিরুজ্জামান মনির বলেন, নাটোরে পানির স্তর ৩৫-৪০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। এছাড়াও অনেক স্থানে এর অবস্থান ২০-৩০ ফুট নিচে। ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নিচে নামলেও বর্ষাকালে আবারো স্বাভাবিক হয়ে যায়। একারণে তেমন কোনো সমস্যা হয় না।

বিএমডিএর রংপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী এ কে এম মশিউর রহমান বলেন, রংপুরে ভূগর্ভস্থ পানির অবস্থান ১৫ থেকে ২৫ ফুট নিচে। দশ বছরের ব্যবধানে পানির স্তর নেমেছে ২ ফুট।

বিএমডিএর নওগাঁর উপসহকারী প্রকৌশলী এমদাদুল হক জানান, নওগাঁর আত্রাইয়ে ভূগর্ভস্থ পানি ২০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। ২০১৪ সালে যা ছিল ১৬ ফুট নিচে।

বিএমডিএর জয়পুরহাটের নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী আশেকুর রহমান বলেন, জয়পুরহাটে স্থান ভেদে ভূগর্ভস্থ পানি ৪০-৬০ ফুট নিচে অবস্থান করছে। যদিও এতে তেমন কোনো সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে না।

জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার কোশালপুর নওপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ বলেন, এক যুগ আগে গভীর নলকূপের পাইপ সর্বোচ্চ ২৮ ফুট নিচে থাকলেই পানি পাওয়া যেত। কিন্তু এখন একই পাইপ ৬০ ফুট নিচে বসিয়েও পানি পাওয়া যাচ্ছে না। পানি তুলতে এখন ৬৫ ফুট পাইপের প্রয়োজন। 

তিনি আরও বলেন, এক যুগ আগে এক মৌসুমে এক বিঘা ধানী জমিতে সেচের খরচ হত ৪০০-৫০০ টাকা। এ অঞ্চলে বর্তমানে প্রায় তিনগুণ সেচ খরচ বেড়েছে। একই পরিমাণ জমিতে সেচের খরচ এখন ১৪০০ টাকা। তবে আগের তুলনায় বিদ্যুতের ও জ্বালানি তেলের দামও বেড়েছে।

ছবিঃ জর্ডান ওপেল

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের বগুড়ার অতিরিক্ত উপপরিচালক (শস্য) এনামুল হক বলেন, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নেমে যাওয়ায় কৃষিজমিতে সেচ দিতে বেশি সময় লাগছে। এতে বিদ্যুৎ বা জ্বালানী অপচয়ের পরিমাণ বেশি হচ্ছে। ফলে সেচ খরচ বেড়ে যাওয়ায় কৃষিতে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও কৃষিজমি মরুকরণের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। 

ভূগর্ভস্থ পানির উপর অতিনির্ভরশীলতার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ফসলের নিবিড়তা বেড়ে গেছে। একই সঙ্গে বার্ষিক গড় বৃষ্টিপাত কম ও বৃষ্টিপাতের অসম বন্টনের ফলে এ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছে। 

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের বগুড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদ বলেন, পানির স্তর নিচে নামায় পানির গুণগত মানে কোন পরিবর্তন হয়নি। পানিতে ভারী ধাতুর পরিমাণও বাড়েনি। তবে সুপেয় পানির প্রাপ্তির ক্ষেত্রে খরচ বেড়েছে। 

তিনি আরও বলেন, এ জেলার হস্তচালিত নলকূপগুলোয় পানি পেতে কোনো ধরণের সমস্যা এখনো দেখা দেয়নি। তবে বছরের মে মাসে এই নলকূপগুলোর মধ্যে শতকরা ২ ভাগে পানি থাকে না। পরবর্তীতে তা আবারো স্বাভাবিক হয়ে যায়।

বগুড়ার কাহালু উপজেলার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা এসএম আল-আমিন বলেন, ভূগর্ভস্থ পা‌নির স্তর এভাবে নিচে নামতে থাকলে ফলের উৎপাদন এক পর্যায়ে অর্ধেকে নেমে আসবে। ফল গাছের শিকড় পর্যাপ্ত পানি না পাওয়ায় অনেক অঞ্চলে বহুবর্ষজীবী (আম, জাম, কাঁঠাল) ফলগাছগুলোর ফলন শতকরা ৩০ ভাগ কমেছে।

বগুড়া সরকারি আজিজুল হক কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের প্রভাষক আবু সাঈদ দ্য মেট্রোপলিসকে বলেন, “জলবায়ু প‌রিবর্তনের কারণে প্রকৃ‌তির স্বাভা‌বিকত্বেও বিশেষ প‌রিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ভূগর্ভস্থ পা‌নির স্তর অবনমন তেম‌নি এক‌টি নে‌তিবাচক প‌রিবর্তন। ভূগর্ভস্থ পা‌নি আমরা বি‌ভিন্ন কারণে ব্যবহার ক‌রি। কৃ‌ষিপ্রধান এ দেশে কৃ‌ষিতে সেচ কাজে ভূগর্ভস্থ পা‌নির ব্যবহার বৃ‌দ্ধি পেয়েছে। এর প্রধান কারণ জলাভূ‌মি ভরাট করা, নদীতে পর্যাপ্ত পা‌নি না থাকা। অনেক কারণ থাকলেও বৈ‌শ্বিক উষ্ণায়নকেই তার মধ্যে প্রধান হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা ভূগর্ভস্থ পা‌নি ব্যবহার করবো। তবে তা হতে হবে স্বাভা‌বিক মাত্রায়। স্বাভা‌বিক মাত্রায় ব্যবহার করা হলে বৃ‌ষ্টির পানিতে তা আবার পূর্ণ হয়। যাকে আমরা গ্রাউন্ড ওয়াটার রিচার্জ ব‌লি।”

তিনি আরও বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টিপাতের সময় বিস্তার কমে গেছে। সময়মত বৃ‌ষ্টিপাত না হওয়ায় কৃ‌ষিজ‌মি পা‌নি পাচ্ছে না। নদীতে পর্যাপ্ত পা‌নি না থাকায় ও বৃ‌ষ্টির অভাবে আমরা সেচের জন্য ভূগর্ভস্থ পা‌নির ওপর বে‌শি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছি। এতে করে মা‌টির নিচের পা‌নি যে হারে তোলা হচ্ছে, সেই হারে বৃ‌ষ্টির অভাবে তা পূরণ হচ্ছে না। ফলে ভূগর্ভস্থ পা‌নির স্তর দিন দিন নিচে নেমে যাচ্ছে। বিশেষ করে বৃ‌ষ্টিহীন শীতকালে পা‌নির স্তর অনেক নিচে নেমে যাচ্ছে।”

কানাডায় কর্মরত বাংলাদেশী পানি সম্পদ প্রকৌশলী (ম্যাট্রিক্স স্যলুশন) সাবরিনা রশিদ সেওঁতি দ্য মেট্রোপলিসকে বলেন, “ভূগর্ভস্থ পানি নিষ্কাশন বা কমে যাওয়ার প্রধান কারণ হলো ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলন করা। গত কয়েক দশক ধরে, আমরা ভূগর্ভস্থ পানির উপর অত্যন্ত নির্ভরশীল ছিলাম এবং প্রচুর পরিমাণে ভূগর্ভস্থ পানি তুলে ব্যবহার করেছি। আমাদের আসলে উচিত ছিল ভূপৃষ্ঠের পানি বিশুদ্ধ করে সেটা দিয়ে কৃষি, গৃহস্থালির মতো মৌলিক পানির চাহিদা পূরণ করা। কিন্তু তা না করে আমরা ভূগর্ভস্থ পানি ব্যবহার করেছি সব কাজে। আমাদের সরকারের এই নীতিটা ভুল ছিল।”

তিনি আরও বলেন, “মাটির ওপর ও নিচের পানি পরিকল্পনা ছাড়া ব্যবহার করা উচিত নয়। কিন্তু আমাদের দেশে সেটা পর্যবেক্ষণ করার কোন সরকারি নীতিমালা গ্রহণ করা হয়নি। এর ফলে ভূগর্ভস্থ পানির স্তর কমছে।”

সমাধানের বিষয় জানতে চাইলে সাবরিনা রশিদ সেওঁতি বলেন, “এখন এর সমাধানের জন্য প্রধানত আমাদেরকে ভূপৃষ্ঠের পানি স্থানান্তর করতে হবে। অর্থাৎ মাটির ওপরের এক জায়গার পানি আরেক জায়গায় নিতে হবে। এক্ষেত্রে আমাদের নদীগুলোকে কাজে লাগাতে হবে। ভূপৃষ্ঠের পানি বিশুদ্ধকরণ প্লান্ট তৈরি করতে হবে। সেখানে পানি বিশুদ্ধ করে তা সরবরাহ করতে হবে।”

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles