নওশিন ইয়াসমিন –
একটু অবসর পেলেই ঘুরাঘুরি করতে কে না পছন্দ করে। আমাদের দেশে ঘুরতে যাওয়ার জন্য রয়েছে অনেক ঐতিহাসিক স্থান। আমাদের ধারাবাহিক পরিবেশনা মসজিদ পরিচিতির আজকের পর্বে জানাতে চাই ঐতিহাসিক স্থান কুসুম্বা মসজিদ সম্পর্কে।
রাজশাহী বিভাগের উত্তরেই নওগাঁ জেলার অবস্থান। এটি রাজশাহী বিভাগের বরেন্দ্র অংশ। আত্রাই নদীর পশ্চিম তীরে নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার কুসুম্বা গ্রামে কুসুম্বা মসজিদের অবস্থান। কুসুম্বা মসজিদকে নওগাঁ জেলার ইতিহাস এবং মুসলিম স্থাপত্য শিল্পরীতির অনন্য নিদর্শন বলা হয়ে থাকে। বাংলায় আফগানদের শাসনামলে “শুর” বংশের শেষের দিকে শাসক গিয়াসউদ্দীন বাহাদুর শাহের রাজত্বকালে সুলায়মান নামের এক ব্যক্তি ১৫৫৮ সালে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন বলে জানা যায়।
আমাদের দেশে প্রচলিত পাঁচ টাকার কাগজের নোটে অঙ্কিত সাড়ে চারশো বছরের আগে নির্মিত মসজিদ হিসেবে যে মসজিদের ছবি দেখা যায়, সেটিই কুসুম্বা মসজিদ। মসজিদটি উত্তর- দক্ষিণে ৫৮ ফুট লম্বা, আর ৪২ ফুট চওড়া। চারদিকের দেওয়াল ৬ ফুট পুরু। মসজিদের সামনের দিকে রয়েছে ৩ টি দরজা। দরজা ৩টির মধ্যে ২ টি বড় এবং ১ টি অপেক্ষাকৃত ছোট। মসজিদের চার কোনায় রয়েছে চারটি মিনার। মিনারগুলো মসজিদের দেওয়াল পর্যন্ত উচুঁ ও আটকোনাকার। ২সারিতে রয়েছে মোট ৬ টি গম্বুজ। মসজিদের মিহরাবগুলিকে পাথরের খোদাই করা নকশার মাধ্যমে তুলে ধরা হয়েছে এবং মসজিদের কিবলার দেওয়াল জুড়ে গোলাপের নকশা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
মসজিদের ভিতরে উত্তর-পশ্চিম দিকে স্তম্ভের উপরে একটি উচুঁ আসন রয়েছে। অনেকের ধারণা, এই আসনে বসেই তৎকালীন কাজী/বিচারকরা বিভিন্ন সমস্যার সালিশ ও বিচার পরিচালনা করতেন। ১৮৯৭ সালের এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে মসজিদটির ৩ টি গম্বুজ নষ্ট হওয়ায় পরবর্তীতে সেগুলো প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর সংস্কার করেন।
কুসুম্বা মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ দিকে রয়েছে প্রায় ৭৭ বিঘা জমির উপর একটি বিশালাকারের দীঘি। মসজিদের খোলা অংশ থেকে শুরু করে একটি পাথর বসানো সিড়িঁ দীঘির পানি পর্যন্ত নেমে গেছে। প্রায় ১২০০ ফুট লম্বা এবং ৯০০ ফুট চওড়া দীঘিটি গ্রামবাসিদের পানির চাহিদা পূরন করে।
রাজধানী থেকে কুসুম্বা মসজিদ পর্যন্ত যেতে চাইলে ঢাকা থেকে প্রথমে রাজশাহীতে যেতে হবে। কারন রাজশাহী ছাড়া এখানে যাওয়া সম্ভব না। এক্ষেত্রে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী এসি ও নন এসি বাসের ভাড়া পড়বে ৬০০ – ১২০০ টাকা। এরপর রাজশাহী মহানগরের গোরাহাঙ্গা রেলগেট বাস স্টপেজ থেকে নওগাঁর বাসে উঠে ৫০ টাকা ভাড়ায় মান্দার ফেরিঘাটের আগে কুসুম্বা মোড়ে নামতে হবে। এখানে নেমে ১ মিনিটের পথ হাঁটলেই যাওয়া যাবে কুসুম্বা মসজিদে।
থাকার জন্য নওগাঁতে জেলাপরিষদের একটি ডাকবাংলো রয়েছে। এছাড়াও বেশ কিছু সাধারণ মানের আবাসিক হোটেল রয়েছে। যার খরচ পরবে ৫০০- ১০০০ টাকার মধ্যে। এছাড়াও নওগাঁর দেওলিয়া বাজারে বেশ কিছু মিষ্টান্ন ভান্ডার এবং রেস্তোরাতে কম দামে খাবার পাওয়া যায়।