back to top
6.2 C
New York
Monday, November 25, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

পাটের গোডাউনে তিনদফা রহস্যের আগুন

ছবি: খুলনার আড়ংঘাটার বকুলতলা খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সে পাটের ঝুট গোডাউন আগুনে পুড়ে ছাই হয়েছে।

রাশিদুল ইসলাম-

পাটের ঝুট গোডাউন খুলনার আড়ংঘাটার বকুলতলা খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সে একবার নয়, পরপর তিনবার রহস্যজনক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। আর এতে ঝুঁকিতে পড়ছেন গোডাউন সংলগ্ন এলাকার বসবাসরত মানুষ। যে কোন সময় বড় ধরনের প্রাণহানি বা দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। মালিক পক্ষের দাবি, আগুনে তিন কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগ সঠিক নয়। সর্বশেষ ৭ই জানুয়ারি গোডাউনটিতে আগুন লাগে। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিটের দেড়ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। পরে ড্যাম্পিং ডাউনের কাজ করা হয়।

স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করে বলেন, খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সের মালিক মোঃ সেলিম শেখ দীর্ঘদিন ধরে ঘনবসতি এলাকার মধ্যে পাট গোডাউন তৈরি করে ব্যবসা চালিয়ে আসছে। বীমার টাকা তোলার জন্য পরিকল্পিতভাবে এই গোডাউনে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে মালিকপক্ষ। 

এর আগেও দুইবার একইভাবে এই গোডাউনে আগুন লেগেছিল। গত দুইবারের মতো এবারও আগুন লাগার পর মালিকপক্ষের কেউ ঘটনাস্থলে আসেনি। এরমধ্যে ২০১৭ সালের ১৮ই জানুয়ারি গোডাউনটিতে প্রথম দফায় রহস্যজনকভাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালের ২৬শে অক্টোবর একই গোডাউনে আগুন লাগে। দু’দফার আগুনে পার্শ্ববর্তী একাধিক বাড়িঘর পুড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

আড়ংঘাটা ইউপি সদস্য মোঃ আল-আমিন শেখ বলেন, ‘’এই নিয়ে ৩ বার আগুন ধরেছে। প্রথমবার ফায়ার সার্ভিসের সাথে থেকে আমি নিজে এলাকাবাসীকে নিয়ে আগুন নিভিয়েছিলাম। আগের মতো এবারও পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। মালিক কী যে ব্যবসা করেন তা আমরা জানি না।‘’

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ মাহফুজুল আলম সুমন বলেন, ‘’দুপুর ১২টার পর ধোঁয়া উড়তে দেখি। আস্তে আস্তে আগুন লাগে। পরে ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশকে সংবাদ দেই। ফায়ার সার্ভিসের বিভিন্ন ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসলেও ধোঁয়া উড়ছে। ফলে আশঙ্কা রয়ে গেছে। এই পাটগুলো না সরালে আরও আগুন লাগতে পারে। আমরা গোডাউন মালিককে জানিয়েছি, আবাসিক এলাকায় যেন এই ব্যবসা না করে। কিন্তু সে তারপরও শোনেনি। এটা বসতি এলাকা, কয়েকটি বাড়ি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।‘’

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক মোঃ তুহিন আহমেদ বলেন, খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সের মালিক সেলিম শেখের পাটের ঝুট গোডাউনে আগুন লেগেছে। গোডাউনের পাশেই আমার বাড়ি। ২০১৭, ২০১৯ ও ২০২৩ মিলিয়ে তিন দফায় এই গোডাউনে আগুন লেগেছে। বারবার আগুন লাগার পরে মালিককে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায় না। তিনি হারিয়ে যান। পাশে আমার বাড়ি থাকায় প্রতিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি। এর আগের বার বাড়ির সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়েছে। প্রায় দুই লাখ টাকার জিনিসপত্র নষ্ট হয়েছে। এবার টিনশেড বিল্ডিং করেছি। এবার সেটারও অর্ধেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোডাউনের আশপাশে অনেকেই বসবাস করে। সরিয়ে নিতে বলা হলে তিনি সরিয়ে নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েও শোনেনি। এলাকার জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে জানানোর পরও এই জনবসতির মধ্যে তিনি গোডাউন চালিয়ে যাচ্ছেন।

ক্ষতিগ্রস্ত মুর্শিদা জানান, ‘’বিগত দিনে এই কারখানায় আগুনে পুড়ে আমার সব জিনিস পত্র শেষ হয়ে যায়। ক্ষতিপূরণ হিসাবে কারখানা মালিক সামান্য কিছু টাকা প্রদান করে। আবারো আমি ধার করে আস্তে আস্তে নতুন করে ঘর তুলি। শনিবার রাজমিস্ত্রিরা নতুন ঘরে কাজ করছিল। সেই সময় আগুন আগুন বলে চিৎকার শুনি। স্থানীয়রা এসে আমার ঘরের মালামাল যতটুকু পেরেছে সরিয়েছে। বাকি সব পুড়ে গেছে। আগুনের তীব্রতায় ঘরের দেয়াল ফেটে গেছে। সেলিম তো বসে বসে টাকা গোনে, বড় লোক হচ্ছে, আমাদের ক্ষতিপূরণ দেবে কে?’’

ক্ষতিগ্রস্ত সাবিনা জানান, ‘’যখন আগুন লাগে, তখন আমার বাচ্চা দু’টো ঘরে ঘুমিয়ে ছিল। আগুনের খবর শুনে এই প্রখর শীতের মধ্যে খালি গায়ে বাচ্চা দুটোর হাত ধরে বাইরে বের হয়ে চলে আসি। রাতে আগুন লাগলে কি অবস্থা হতো। এই কারখানার কারণে আমরা চরম উৎকন্ঠা আর আতঙ্কের মধ্যে দিন যাপণ করছি। আমাদের জানমালের নিরাপত্তার জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি। 

এদিকে ঘটনাস্থলে পাওয়া না গেলেও, খানজাহান আলী জুট ট্রেডার্সের মালিক  সেলিম শেখ মুঠোফোনে বলেন, আগুন লাগার সময় আমিও গোডাউনেই ছিলাম। শ্রমিকরা কাজ করছিল। হঠাৎ করে দেখি ধোঁয়া উড়ছে, কিছু বুঝে উঠার আগে মুহূর্তেই আগুন লেগে যায়। দ্রুত সবাই বেরিয়ে আসি। আগুনে আমার প্রায় ৩ কোটি টাকার মালামালের ক্ষতি হয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘’অনেকে অনেক কথা বলবে। আমার ক্ষতি হয়েছে। আমি বুঝছি জ্বালা কি। আমার ব্যাংক ঋণ রয়েছে ৬০ লাখ টাকা। ক্ষতি হয়েছে ৩ কোটি টাকার ওপরে। গোডাউনে মেশিন রয়েছে ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার। এগুলো বুঝাবো কাকে? আমার পার্টনারকে বুঝাতে পারছি না। আমি যদি বলি, পিছন থেকে আগুন লাগিয়ে আমাকে আটক করানোর চেষ্টা করেছে, তাহলে কেমন হবে? একাধিক অগ্নিকান্ডের বিষয়টি স্বীকার করে ব্যবসায়ী সেলিম আরো বলেন, আগে আগুন লেগেছে, তবে তেমন কিছু নয়।‘’

খুলনা বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস অফিসের উপসহকারি পরিচালক তানহারুল ইসলাম বলেন, আড়ংঘাটা বকুলতলা এলাকায় পাটের ঝুট গোডাউনে আগুন লাগার সংবাদ পেয়ে আমরা দুপুর ১২টা ৪০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণের কাজ শুরু করি। ফায়ার সার্ভিসের ৭টি ইউনিট দেড়ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে দুপুর ২টা ১০ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। কয়েকটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ড্যাম্পিং ডাউনের কাজ চলমান রয়েছে। রাতে আমাদের সদস্যরা এখানে থেকে কাজ করে। সম্পূর্ণ কাজ রোববার শেষ হয়েছে।

পরিকল্পিতভাবে আগুন লাগানো হয়েছে স্থানীয়দের এমন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, তদন্ত করলে বিষয়টি আমরা বুঝতে পারবো, আসলে কি ঘটনা ঘটেছে। তার আগে বলা মুশকিল। যারা এখানে কাজ করে,তাদের অসতর্কতাবশত বা বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে আগুন লেগে যেতে পারে। আগুন লাগার কারণটা কি এবং কি কারণে আগুন লেগেছে পরবর্তীতে আমরা জানাতে পারব। এর আগেও এখানে আগুন লেগেছিল, আমরা নিভাতে এসেছিলাম। তদন্ত শেষে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে। 

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles