বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে। ছবিঃ সংগৃহীত-
মাসুম হোসেন-
চলতি বছরে বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু হওয়ার সম্ভাবনা জাগিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। অবকাঠামো নির্মাণের প্রায় দুই যুগ পর এটি চালু হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে বগুড়াসহ উত্তরের ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। অর্থনীতিতে ঘটবে ব্যাপক পরিবর্তন।
এর আগে, আওয়ামী লীগ সরকার বগুড়ার বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালুর উদ্যোগ নিলেও বিএনপির কারণে তা বহু বছরেও বাস্তবায়ন হয়নি। বিএনপি সরকারের আমলে বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে চালু না করে প্রশিক্ষণ মাঠ হিসেবে বিমান বাহিনীর কাছে এটি হস্তান্তর করা হয়। ফলে বগুড়ার মানুষের স্বপ্নের পথ আরও দীর্ঘ হয়।
২০২১ সালের ১ মার্চ বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে একটি লিখিত প্রস্তাবনা পাঠান বগুড়া-৭ (শাজাহানপুর-গাবতলী) আসনের সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু। তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বগুড়া বিমানবন্দর চালুর বিষয়ে পাঁচ সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক)।
২০২১ সালের ১৫ নভেম্বর ওই কমিটির সদস্যরা বগুড়া বিমানবন্দরের জন্য নির্ধারিত স্থান পরিদর্শন করেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলু।
বেবিচক প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন উপসচিব ইশরাত জাহান পান্না। সদস্যরা হলেন উপ-পরিচালক (এয়ার ট্রাফিক ম্যানেজমেন্ট) মো. মাসুদ রানা, নির্বাহী প্রকৌশলী (সিভিল) মো. আমিনুল হাসিব, সহকারী পরিচালক (সিএনএস) প্রশান্ত কুমার সাহা ও সিনিয়র ড্রাফটম্যান কবির হোসেন।
বিমানবন্দরের জন্য নির্ধারিত স্থান তারা সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। পরে বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালুর পক্ষে ওই কমিটি প্রতিবেদন দাখিল করেন বলে জানান সংসদ সদস্য বাবলু।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-অর্থনীতি, কৃষিসহ সব দিক থেকেই দিন দিন এগিয়ে যাচ্ছে বগুড়া। এ জেলায় বিনিয়োগ করছেন নতুন শিল্প উদ্যোক্তারা। বগুড়ায় অর্ধ শতাধিক শিল্পকারখানা গড়ে উঠেছে। ব্যবসায়িক প্রয়োজনে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের আসা-যাওয়া এ জেলায়। সড়ক পথে ঢাকা থেকে বগুড়ায় আসতে যানজটে পড়ে অনেক সময় অপচয় হয়। এছাড়াও যোগাযোগে ভোগান্তির কারণে অনেক ব্যবসায়ী বগুড়ায় বিনিয়োগ করতে চান না। বগুড়ায় অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। বিদেশি ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বগুড়ায় না আসলে অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করেও সুফল পাওয়া যাবে না। সবদিক থেকেই বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমানসেবা চালুর প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৮৭ সালে বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের জন্য প্রথম উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে ওই সময় নানা জটিলতায় তা আটকে যায়। পরবর্তীতে ১৯৯১ সালে একনেক সভায় বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। ১৯৯৫ সালে বগুড়ার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০৯ দশমিক ৮১ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় সব অবকাঠামো নির্মাণ কাজ শুরু করে। ২০০০ সালে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হয়। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে বিমান আর আকাশে উড়েনি। পরে ২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় আসার পর ওই স্থান বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। বর্তমানে সেখানে বিমানবাহিনীর একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র রয়েছে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে বিমানসেবা চালুর মতো সব ধরনের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে বগুড়ায়। বগুড়ায় বিমানবন্দর চালু হলে বদলে যাবে উত্তরের অর্থনীতির সার্বিক চিত্র।
সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু বলেন, ‘বর্তমানে বগুড়া বিমানবন্দরে ছোট রানওয়ে রয়েছে। যা বিমান বাহিনীর প্রশিক্ষণের জন্য করা হয়েছে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করতে হলে আরও অনেক বড় রানওয়ের প্রয়োজন। সেক্ষেত্রে আরও জায়গা অধিগ্রহণ করতে হবে। কিন্তু ওই এলাকার
আশেপাশে ছোট-বড় অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। সেগুলো এখন ভেঙে ফেলতে হবে। একই সঙ্গে জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর কাছে একটি লিখিত প্রস্তাবনাও দিয়েছি আমি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিএনপির আমলে বিমানবন্দরের নির্ধারিত স্থানটি বিমান বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করা হয়। অথচ সেসময় বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করার কথা ছিল। বিএনপির কারণেই বগুড়ায় আজও বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু হয়নি।’
বগুড়া চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সদস্য আজিজ কাইসার দ্য মেট্রোপলিসকে বলেন, ‘বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু হলে উত্তরের অর্থনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটবে। বিশেষ করে শিল্পকারখানাগুলো ব্যবসায়িক ক্ষেত্রে সুফল ভোগ করবে। বিমানবন্দরকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। পাশপাশি উদ্যোক্তার সংখ্যাও বাড়বে এ জেলায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘বর্তমানে বিদেশিরা সড়ক পথে বগুড়ায় আসতে চান না। কারণ সড়কে যাতায়াতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। তবে বিমানবন্দর চালু হলে উত্তরে বিদেশিরাও বিনিয়োগ করতে পারেন। একই সঙ্গে বগুড়াসহ উত্তরের উৎপাদিত পণ্য সরাসরি বিদেশে রফতানি করতে পারবেন ব্যবসায়ীরা। এছাড়াও পণ্য আমদানিতে সুবিধা পাওয়া যাবে।’
সংসদ সদস্য রেজাউল করিম বাবলু দ্য মেট্রোপলিসকে বলেন, ‘বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দর চালু করতে দশ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের আলোচনা করেছিলেন বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী। তবে করোনা পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবে তা আর হয়ে উঠেনি। তবে এখন পুরোদমে কাজ চলছে। ২০২৩ সালের মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে বগুড়ার বিমানবন্দর চালু হওয়ার সম্ভাবনা আছে।’