back to top
20.8 C
New York
Monday, October 7, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

ই-কমার্স : পণ্য বা পরিষেবা ক্রয়-বিক্রয়ের ডিজিটাল পদ্ধতি

মোঃ ইমরান হোসেন – 

ডিজিটাল পদ্ধতিতে ইন্টারনেট ব্যবহার করে ইলেকট্রনিক ডিভাইসের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা ক্রয়-বিক্রয়, অর্থ লেনদেন ও ডাটা আদান-প্রদান কার্যক্রম সম্পন্ন করাকে ই-কমার্স বলা হয়। বাংলাদেশে ই-কমার্সের যাত্রা আরম্ভ হয় এই একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে যখন ইন্টারনেট তেমন সহজলভ্য ছিল না, আবার নির্ভরযোগ্য কোন অনলাইন লেনদেন ব্যবস্থাও ছিলনা। 

ই-কমার্সকে সহজতর করার জন্য এবং তথ্য প্রযুক্তির বিকাশকে উৎসাহিত করার জন্য বাংলাদেশ সরকার ২০০৬ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন প্রণয়ন করে এবং ২০০৯ সালে বাংলাদেশ ব্যাংক অনলাইনে লেনদেনের অনুমতি দেয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১১ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট এখনি ডট কম এবং আজকের ডিল ডট কম। এরপর ২০১২ সালে যাত্রা শুরু করে বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট রকমারি ডট কম। ফেসবুক থেকেও শুরু হয় ছোট ছোট উদ্যোক্তাদের হরেক রকমের অনলাইন শপ।

ই-কমার্স খাতে সত্যিকারের গতি আসতে শুরু করে ২০১৩ সাল থেকে। এর কারণ হিসেবে বলা যায় ঐ বছর ক্রেডিট কার্ড দিয়ে আন্তর্জাতিক কেনাকাটার ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। আবার দেশের মোবাইল অপারেটরগুলো দ্রুতগতির তৃতীয় প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবাও (থ্রিজি) চালু করে। বাংলাদেশ ব্যাঙ্ক, ব্যাসিসসহ আরও অনেক প্রতিষ্ঠান ই-কমার্সকে জনপ্রিয় করতে শুরু করে নানান কর্মসূচি, মেলা, সেমিনার ইত্যাদি। এ সময় যাত্রা শুরু করে আরেকটি জনপ্রিয় ই-কমার্স সাইট প্রিয়শপ ডট কম। বিদেশী বিনিয়োগও আসতে শুরু করে আমাদের দেশে। উল্লেখ্য, দারাজ ২০১৪ সালে যাত্রা শুরু করে এবং ২০১৮ সালে চীনের আলিবাবা এটিকে অধিগ্রহণ করে।

এর মধ্যে চতুর্থ প্রজন্মের ইন্টারনেট সেবা (ফোরজি) চালু হয়েছে। মানুষের স্মার্টফোন ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েছে। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) প্রদত্ত তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট ইন্টারনেট গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি ৩৮ লক্ষ, যার মধ্যে মাত্র ১ লক্ষ ব্রডব্যান্ড সংযোগ ব্যবহার করে আর বাদবাকি যা আছে সবাই মোবাইল ইন্টারনেট ব্যবহারকারী।

করোনা ভাইরাসের অতিমারির সময় গ্রাহকের দোরগোড়ায় পণ্য পৌছে দেওয়ায় দেশে এই ই-কমার্সের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায় তড়িৎ গতিতে। কোভিডের শুরুর বছর কেবল ২০২০ সালেই অনলাইনে বেচাকেনা বেড়ে যায় প্রায় ৩ গুণ। প্রায় ১ লাখ নতুন উদ্যোক্তার পাশাপাশি তৈরি হয়েছে ৫ লাখ কর্মসংস্থান। কোভিডের আগেও এই খাতের বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ছিল ৪০-৪৫ শতাংশ। লেনদেন বৃদ্ধি পেয়ে খাতটির বর্তমান মূল্য দাঁড়িয়েছে প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকা।

এর ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশ সরকার ২০২২ সালের জুন মাসে বিদেশী ই-কমার্স কোম্পানির ৪৯ শতাংশ সর্বাধিক অনুমোদিত শেয়ারহোল্ডিং সীমা প্রত্যাহার করে ১০০ শতাংশ বিদেশী মালিকানাধীন কোম্পানিগুলিকে বাংলাদেশে কাজ করার সুযোগ করে দেয়।

ক্রমবর্ধমান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস) শিল্প ভোক্তাদের আরও সহজে অনলাইনে পণ্য কিনতে সক্ষম করেছে, যা ই-কমার্স খাতকে উৎসাহিত করেছে। ২০২১ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ১৫ টি ব্যাংক এই এমএফএস সরবরাহ করছে, যার মধ্যে প্রায় ৩ কোটি ৬৭ লক্ষ সক্রিয় এমএফএস অ্যাকাউন্ট। বাজারে জনপ্রিয় বিদ্যমান মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস প্রোভাইডারগুলির মধ্যে রয়েছে বিকাশ, নগদ, রকেট এবং ইউক্যাশ। এরা ক্যাশ-ইন, ক্যাশ-আউট, মার্চেন্ট পেমেন্ট, ইউটিলিটি পেমেন্ট, বেতন বিতরণ, বিদেশী রেমিট্যান্স এবং ফান্ড ট্রান্সফারসহ বিভিন্ন সেবা প্রদান করে থাকে। 

নগদ লেনদেন এখনও দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের প্রধান আর্থিক লেনদেন পদ্ধতি।  ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ই-ক্যাব) এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশেরও বেশি ই-কমার্স ব্যবহারকারী ক্যাশ-অন-ডেলিভারি পেমেন্ট মডেল পছন্দ করেন। যদিও বাংলাদেশের বেশিরভাগ ই-কমার্স বিজনেস পোর্টালে ক্রেডিট কার্ড লেনদেনের সুবিধার্থে সমন্বিত মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট রয়েছে।

ই-ক্যাবের হিসাবমতে বর্তমানে বছরে মোট বিক্রির পরিমাণ আট হাজার কোটি টাকার মতো। কটেজ, মাইক্রো, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ (সিএমএসএমই) খাতের এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ২০২৩ সালের মধ্যে এই বাজার অন্তত তিনগুণ আকার ধারণ করবে। বর্তমানে দেশে প্রায় ২,৫০০ ই-কমার্স কোম্পানি এবং কমপক্ষে ৫০,০০০ ফেসবুক ব্যবসায়িক পৃষ্ঠা রয়েছে। এছাড়া দেশের বড় করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও বুঝতে পেরেছে যে আগামী দিনগুলোতে অনলাইনভিত্তিক বাজার অনেক বড় হবে। তাই তারাও বিভিন্নভাবে অনলাইনভিত্তিক মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে।

ইন্টারনেট গ্রহণের দ্রুত হার, লজিস্টিক যোগাযোগের উন্নতি আর অনলাইন ব্যাংকিং ও মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (এমএফএস)-এর ক্রমাগত উন্নতি ই-কমার্স খাতের বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।  এছাড়াও, প্রযুক্তি ব্যবহারে অভ্যস্ত তরুণসমাজ (জনসংখ্যার ৫০ শতাংশেরও বেশি ৩৫ বছরের কম বয়সী) আর মধ্যবিত্ত ও সমৃদ্ধ শ্রেণী জনসংখ্যার ক্রমবর্ধমান হার (প্রতি বছর ১০ শতাংশ) এই খাতের বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে।

২০২১ সালে দেশের ই-কমার্স সেক্টরে একটি রুক্ষ যাত্রা দেখা গেছে। বেশ কয়েকটি প্ল্যাটফর্মের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ এবং আর্থিক জালিয়াতির  অভিযোগ প্রকাশিত হয়েছে। যদিও এখন নতুন নির্দেশিকার খসড়া তৈরি করা হয়েছে, তবে গ্রাহক এবং বিক্রেতারা এখনও ই-ভ্যালি এবং ই-ওরেঞ্জের মতো সংস্থাগুলো কয়েক শ’ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে।

এর প্রেক্ষিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ই-কমার্স গাইডলাইন ২০২১ জারি করেছে এবং ডিজিটাল মার্কেট প্লেসের কার্যপদ্ধতি নবায়ন করেছে। যেমন – ডিজিটাল মার্কেটপ্লেসগুলিতে বিক্রেতার বিস্তারিত তথ্য (অনুচ্ছেদ ৩.১.২) প্রদর্শন করতে হবে। নির্দেশিকা অনুযায়ী, ক্রেতাদের কাছে অনলাইনে উপস্থাপিত পণ্যের স্পষ্ট বিবরণ থাকতে হবে যাতে গ্রাহক কী কিনছে সে সম্পর্কে বাস্তবসম্মত ধারণা নিতে পারে।

নতুন নির্দেশিকা অনুযায়ী, মার্কেটপ্লেসের মাধ্যমে পণ্য বা পরিষেবা বিক্রয়ের আগে মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষ এবং বিক্রেতার মধ্যে একটি চুক্তি হতে হবে (অনুচ্ছেদ ৩.২.১৬)। এছাড়া পণ্য ক্রয় সংক্রান্ত শর্তাবলী যেমন রিটার্ন পলিসি, সম্ভাব্য মূল্য পরিবর্তন নীতি, ডেলিভারি পদ্ধতি এবং ডেলিভারি সময়, বা পণ্য পরিবর্তন নীতিগুলিও মার্কেটপ্লেস দ্বারা প্রদর্শিত হতে হবে (অনুচ্ছেদ ৩.৫.১,২,৩)।

গাইডলাইন অনুযায়ী, মার্কেটপ্লেস কর্তৃপক্ষকে পণ্য ও সেবা সম্পর্কে অভিযোগের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে এবং একজন কমপ্লায়েন্স অফিসার নিয়োগ করতে হবে যিনি ভোক্তা সুরক্ষা বিভাগ সহ অন্যান্য সংস্থার সাথে সমন্বয় করতে পারেন (অনুচ্ছেদ ৩.৪.১)।

 

সরকার এভাবে আইন ও নীতিমালা প্রণয়ন এবং যুগোপযোগী করার মাধ্যমে গ্রাহকদের ভবিষ্যতে প্রতারণা থেকে সুরক্ষা দেয়ার উদ্দেশ্যে কাজ করে যাচ্ছে। আশা করা যায় এই নীতিমালা গ্রহণের পর সেটা বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশে ই-কমার্সের যে সম্ভাবনা রয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে।

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles