ইমন চৌধুরীর সুরে আর তানজির তুহিনের কণ্ঠে কালজয়ী কবিতা প্রস্থান
আদিল সাদ –
আদিকাল থেকে বাংলার মৌলিক গানে কবিতার রাজত্ব ছিল। রূপকথার গল্পের মতো কবিদের থেকে আসত গানের কথা, সুরের শক্তি দিয়ে সৃষ্টি হতো আধুনিক গান। এমন আয়োজনে আধুনিক সাহিত্যকে অলংকৃত করে গেছেন জীবনানন্দ দাশ, রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, আল মাহমুদ ও শামসুর রাহমান। আধুনিক কবিতায় ব্যান্ড গানের সুর তরুন সমাজকে যেভাবে আলোড়িত করেছে তার প্রধান উদাহরণ হল কবি শামসুর রহমানের উত্তর কবিতা থেকে “সুন্দরীতমা আমার, তুমি নীলিমার দিকে তাকিয়ে বলতে পারো, এই আকাশ আমার” গানটি। এপার-ওপার দুই বাংলাতেই আকাশসম জনপ্রিয়তা অর্জন করে।
এর পরে বেশ কিছুটা সময় সঙ্গীতাঙ্গনের সেরা শিল্পীদের আবার কবিতার নিয়ে কাজ করা যেন থমকে ছিল৷ বাস্তবিক অর্থে কবিতার উপর সুর করে গান করা কোন শিল্পীর বা সুরকারের জন্য বেশ কষ্টসাধ্য আর সময়সাপেক্ষ। দীর্ঘ বিরতির পর ২০২১ সালের মে মাসে ওপার বাংলার কবি শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের কবিতায় সুরারোপ করেন রাশিদ শরিফ শোয়েব আর এতে কণ্ঠদান করেন তানজির তুহিন। এরই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি তানজির তুহিনের কন্ঠে আর সুরকার ইমন চৌধুরীর সঙ্গীতে উঠে এসেছে বাংলা কবিতার রাজকুমার হেলাল হাফিজের কবিতা “প্রস্থান” নিয়ে আরেক কালজয়ী সঙ্গীত। নিচের লিংক থেকে এই গান শুনা যাবেঃ
https://www.youtube.com/watch?v=bhSM6YhGeB0
তানজির তুহিন একজন খ্যাতিনামা সঙ্গীত সাধক, গীতিকার ও গায়ক। শিল্পী হিসাবে তিনি নিজেকে নিয়ে গেছেন অনেক বড় উচ্চতায়, বাংলাদেশের সঙ্গীত প্রিয় মানুষের মাঝে নিজের মৌলিক গান দিয়ে জাত চিনিয়েছেন বহু আগে। তার কণ্ঠে রয়েছে ব্যাকুল সুর, সেই সুরের প্রাণশক্তি এতোটা তীব্র, সেই তীব্রতায় তৈরি হয়েছে ব্যান্ড গানে ভালোবাসার শ্রোতা। এবার প্রস্থান কবিতাটি তার কণ্ঠে তুলে দিয়েছেন সুরকার ইমন চৌধুরী।
“প্রস্থান” কবিতাটি যুগ থেকে যুগান্তরে দিকে ধাবিত হয়। সময়ের পরিবর্তনে এই লেখাটিই যেন ফিরে আসে নতুন প্রেমের সংলাপ হিসাবে। এই কবিতার প্রতিটা অক্ষরের সাথে সুরের সাথে যখন মিলন হয়, হাজার স্বপ্ন ভাসে সেই প্রিয়তমাকে পত্র দেবার বাসনায়। বিকেল ছোঁয়া গল্পে উপমা ছুঁয়ে থাকে – পাওয়া, না পাওয়ার বেদনা। পরিশেষে তৃপ্তির বাসনায় ভুলে যাওয়ার শ্লোগান। ক্যালেন্ডার পাতা, তালপাখাটা এক একটি শব্দের সাথে সুরের ভাবনায় হারিয়ে যায় কোন পাঠকের/শ্রোতার দু চোখে ভাসা স্বপ্ন। ভালোবাসায় ভুল করা বেদনাকে খুন করার নেশায় মানব জীবন এক সময় কাটিয়ে দেয় কোন নির্বাসিত সাগরে ডুবে। সে সাগরের শুধু আছে অভিমান, বেদনা, কষ্ট আর একাকীত্ব থাকার মনোবাসনা। এক জীবনে মানুষ কতটা নষ্ট হতে পারে এই “প্রস্থান” কবিতায় সুরই মনে করিয়ে দিবে আগামীর পাঠক ও শ্রোতাদের।
সব কিছু সফলতা পায় যখন একজন শিল্পী তার ভিতর কবিকে ধারন করতে পারেন। এই গানে শিল্পী নিজেকে কবিতার ভিতর পৌঁছে দিয়ে সুরকে ধারন করেছেন। এভাবেই একজন কবির কবিতা সার্থক হয় কোন বিমূর্ত সুরের ধারাতে।