back to top
20.8 C
New York
Monday, October 7, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

উপকূলীয় জনপদের মানুষের সুপেয় পানির জন্য হাহাকার

জলবায়ু পরিবর্তনের আঘাতে খুলনার উপকূলীয় এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জীবন যাত্রার চিত্র। ছবিঃ সংগৃহীত-

রাশিদুল ইসলাম-

খুলনার সুন্দরবন উপকূল অঞ্চলের মানুষ দুর্বিসহ জীবন যাপন করছে। সুপেয় পানি এখানকার মানুষের এখন প্রধান সমস্যা। মারা যাচ্ছে পুকুর ও ঘেরের মাছ।  জীবন জীবিকার নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য সংগ্রাম করতে হচ্ছে বঞ্চিত এ জনপদের মানুষের কিন্তু তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন হচ্ছেনা।

উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততা থাকায় তা খাওয়ার অনুপযোগী। মূলত আইলা ও সিডরের তাণ্ডবের পর থেকে এসব উপকূলীয় এলাকার সুপেয় পানির উৎসগুলো নষ্ট হয়ে যায়।মেরু অঞ্চলে গলতে থাকা বরফ সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়িয়ে দিচ্ছে ঠিকই কিন্তু এলাকার মিঠা পানির উৎসগুলো লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে।

কয়রা উপজেলার পাথরখালী গ্রামের মফিজুল ইসলাম বলেন, ‘’এলাকায় কোন সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। বৃষ্টির পানি ধরে রাখার জন্য একটি মাত্র জলাধার রয়েছে। এলাকার মানুষ তা থেকে পানি নিয়ে খায়। বছর শেষ না হতেই পানি  ফুরিয়ে যায়।‘’ গাববুনিয়া গ্রামের বিমল মন্ডল বলেন,’’এলাকায় খাবার পানির সমস্যা। ৫/৬ কিলোমিটার দূর থেকে পানি এনে খেতে হয়।আমাদের চারদিকে কত পানি কিন্তু একফোঁটাও খাওয়ার উপায় নেই। ‘’ 

ছবিঃ সংগৃহীত-

উপজেলা জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলী ইমতিয়াজ আহমেদ সুপেয় পানির সমস্যার কথা স্বীকার করে বলেন, ‘’কয়রায় ৫’শ মানুষের জন্য একটি মাত্র ডিপ টিউবওয়েল রয়েছে। যা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। কয়রায় ৫টি পুকুর পুনঃখনন করা হয়েছে। সেখান থেকে মানুষ পানি সংগ্রহ করে থাকে।‘’  

কয়রা উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট কমলেশ কুমার সানা বলেন, ‘’এ এলাকার  মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ ওয়াটার হারভেসটিং ব্যবহার করে। যা চাহিদা অনুযায়ী খুবই কম। কয়রার মানুষের পানির স্থায়ী সমধান করতে হলে পাওয়ার পাম্প স্থাপন করতে হবে। এ জন্য সরকার কে এগিয়ে আসতে হবে এবং সেইসাথে সুপেয় পানি যাতে সাধারণ মানুষের আওতায় আসে এমন পরিকল্পনা হাতে নিতে হবে।‘’ 

মহারাজপুর ইউনিয়নের মঠবাড়ি এলাকার কোহিনুর মালি বলেন, ‘’খাবার পানির সমস্যা চরম। আমাদের পুকুরের পানি পান করতে হয়। এ কারণে মানুষ পানিবাহিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এলাকাতে কোন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নেই। ১৫ কিলোমিটার দূরে কয়রা হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে।‘’

মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন,’’কয়রা ৫টি পুকুর সংস্কার করা হয়েছে। এ পুকুরের পানি ফিল্ডার করা হয়েছে।বাকি মানুষ এমনিতে পুকুরের পানি নিয়ে ফিটকিরি দিয়ে পানি পান করে।‘’

উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, ‘’এ এলাকার পানিতে গ্লাস কার্প,বাগদা চিংড়ি,গলদা চিংড়ি, ভেটকি,পারশি,টেংরা মাছ চাষ করা যায়। কিন্তু অর্থনৈতিক দূরাবস্থার কারনে মানুষ এগিয়ে আসছে না।‘’  

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সাইদুল ইসলাম বলেন,’’ ধান ,গম, ভুট্টা সরিষা, সূর্যমুখী বিভিন্ন শাক সবজি চাষাবাদ করা সম্ভব। ‘’

নদী ভাঙ্গন এলাকার মানুষের অন্যতম সমস্যা। বার বার বসত বাড়ি ছেড়ে যেতে হয় সাগর পাড়ের মানুষ গুলোকে। এ প্রসঙ্গে উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন,’’কয়রা উপজেলার শতকরা ৫০ভাগ মানুষ নদী ভাঙ্গনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র ১০ভাগ মানুষকে পুনঃর্বাসন করা সম্ভব হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের মধ্যে মাত্র ৫ভাগ মানুষকে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে,যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। এ ব্যাপারে সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সাহায্য সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত।‘’

এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সেকশন অফিসার মোঃ আফজাল হোসেন বলেন,’’ টেকসই বেড়িবাঁধের প্রকল্প পাশ হয়েছে। এখনও কাজ শুরু হয়নি। তবে জরুরী ভিত্তিতে বাঁধ সংস্কারের কাজ চলমান রয়েছে। তবে সেটি প্রয়োজনের  তুলনায় খুবই অপ্রতুল।‘’

 উত্তর বেদকাশি ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আলহাজ্ব সরদার নুরুল ইসলাম বলেন,’’এ অঞ্চলের মানুষের সচেতনতা খুবই কম। এজন্য সরকারি  ও বেসরকারি উদ্যোগে সচেতনতামূলক কর্মসূচি হাতে নেয়া উচিত।‘’ 

কয়রা উন্নয়ন সমন্বয় সংগ্রাম কমিটির সভাপতি অধ্যাপক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন,’’স্থায়ী বেড়িবাঁধ নির্মাণ না করা হলে এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের কোন পরিবর্তন হবে না। মানুষকে সচেতন করে তুলতে হলে তাদের বিকল্প আয়ের উৎস করে দিতে হবে। কিন্ত ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য কোন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়নি।‘’ 

কয়রা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম শফিকুল ইসলাম অনেকটা হতাশার সুরেই বলেন,’’শুধু খুলনা নয় দেশের মধ্যে একটি অবহেলিত ও বঞ্চিত জনপদের নাম কয়রা। এ এলাকার মানুষ বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেই বসবাস করে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের জন্য তেমন কোন সাহায্যের ব্যবস্থা নেই। সরকারি বরাদ্দ খুবই সামান্য। আর এনজিওদের কর্মকাণ্ড খুবই বিতর্কিত। নামে মাত্র সাহায্য করে প্রচার প্রচারণায় ব্যস্ত থাকে। এনজিওদের কাজ সেনাবাহিনী দিয়ে মনিটরিং করলে সুষ্ঠ বন্টন হবে। সাধারণ মানুষ উপকার পাবে।‘’

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles