back to top
14.9 C
New York
Sunday, October 6, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

কাফকায়েস্ক

মোস্তফা খালেদ অভি –

ধরলাম আমাদের আশেপাশের এক ক্যারেক্টার রবিউল সাহেব বেশ সাধারণ ও গোছানো জীবন যাপন করেন। সকাল নয়টা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত অফিস করেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনে বন্ধু আর পরিবারের সাথে সময় কাটান, মুভি দেখেন, মাসে ছয় মাসে এক আধ বার ট্যুরে যান। এক সকালবেলা পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করলো অফিসে আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে। অবশ্যই কেউ রবিউল সাহেবকে কোনো না কোনো ভাবে ফাঁসিয়েছে। তিনি মোটামুটি নিশ্চিত যে উল্টাপাল্টা কোনো কাজের সাথে তিনি জড়িত না। তবুও ঐদিন বিকালে তাকে পুলিশ নিজেদের কাস্টডি থেকে জেলে নিয়ে যায়। এর এক সপ্তাহ পর তার ট্রায়াল শুরু হলো। 

ফ্রান্স কাফকার বিখ্যাত উপন্যাস “দ্যা ট্রায়াল” অনেকটা এভাবেই শুরু হয়। সেখানের নায়ক জোসেফকে আমাদের রবিউল সাহেবের মতোই হুট করে একদিন জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। জোসেফ  হতভম্ব অবস্থায় এমন এক প্রক্রিয়ার মধ্যে নিজেকে আবিষ্কার করে যে তাকে কোন ধারায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে বা জুডিশিয়াল সিস্টেম কিভাবে কাজ করে এই ব্যাপারগুলা নিয়ে সে কোনো পরিস্কার ধারনাই করতে পারে না। 

ধরে নিন সকাল সকাল একটা সরকারি সেবা অফিসে আপনি একটা কাজের জন্য গেলেন। বিশাল লাইন। লাইনের সামনের দিকে যাওয়ার গতি ভীষণ কম। এর মাঝে লাঞ্চের বিরতি পড়ে গেল। এরপর বিকালের দিকে আপনি অবশেষে ডেস্কে পৌঁছাতে পারলেন। কিন্তু অফিসার আপনার কাগজপাতি চেক করে বললো এইখানে যেসব ডকুমেন্ট আছে তা যথেষ্ট নয়। এরপর একটা লিস্ট দিয়ে দিলো আরো কি কি ডকুমেন্ট দেখাতে হবে আপনাকে কাঙ্ক্ষিত সেবা পাওয়ার জন্য। এখন এইসব ডকুমেন্টগুলা বানানোর জন্য আপনাকে ঘুরতে হবে আরো কয়েকটা সরকারি অফিস। এক বিরক্তিকর জটিল অবস্থা! 

এই ধরণের ঘটনা বা দৃশ্য কাফকার বেশ কিছু কাজের মধ্যে দেখা যায় যার ব্যাখ্যা করার জন্য মনস্তত্ববীদরা নতুন একটা টার্ম বা শব্দ ব্যবহার করেন – “কাফকায়েস্ক”। কাফকায়েস্ক বলতে খুবই অপ্রয়োজনীয় এবং বিরক্তিকর জটিলতার একটা অবস্থাকে বোঝায়।

কাফকা ব্যক্তিজীবনে একজন ইনস্যুরেন্স কর্মচারী ছিলেন। তার গল্পের বেশির ভাগ নায়করাই অফিস কর্মচারী, যারা তাদের স্বপ্নকে বাস্তবে রুপ দেওয়ার জন্য নিরন্তর সংগ্রাম করে আর নানা অপ্রয়োজনীয়, অযৌক্তিক আর জটিল পরিস্থিতির বাধার সামনে পড়ে। এতসব বাধার পরে যখন মাঝে মাঝে হুট করে সাফল্য আসেও তখন সেই সাফল্যকে একটা সময় মানুষের কাছে অর্থহীন মনে হয়।

কাফকার এক বিখ্যাত গল্প “মেটামরফোসিস”। এর নায়ক গ্রেগর সামসা একদিন ঘুম থেকে উঠে দেখতে পায় যে সে তেলাপোকা হয়ে গেছে। নিজের এই অবস্থা দেখার পর তার মাথার মধ্যে প্রথম যে দুশ্চিন্তাটা আসে সেটা হচ্ছে কিভাবে সে আজকে সঠিক সময়ের মধ্যে অফিসে যাবে। 

তার আরেকটা ছোটগল্পর নাম “পোসাইডন”। এই গল্পের নায়ক পোসাইডন এক প্রাচীন গ্রীক দেবতা। স্বর্গে চাকরি করেন। মানুষের ভালোমন্দ নানা বিষয় নিয়মিত ঠিক করা তার কাজ। এই কাজে সে এতটাই ব্যস্ত থাকে যে যে স্বর্গ থেকে বের হয়ে বাইরের কিছু দেখার সুযোগ কখনো তার হয়নি। স্পয়লার এলার্ট না দিয়ে গল্পের মূলভাবটা শুধু বললে এমনভাবে বলা যায় যে, এই গ্রীক দেবতা আদতে একজন কর্পোরেট কেরানী আর আধুনিক কালের একটা কর্পোরেট অফিসে যে পরিমান কাজের চাপ থাকে সেটা হয়ত একজন দেবতার পক্ষেও করা অসম্ভব।

আসলে আমলাতন্ত্র একা কাফকায়েস্ক তৈরী করে না। মানুষ একটা সিস্টেমকে বুঝতে গিয়ে নিজেই একসময় সিস্টেমের অংশ হয়ে আটকা পড়ে যায়। মারিও পুজোর গডফাদার উপন্যাসে দেখা যায়, একদম শুরুর দিকে মাইকেল কর্লিওনি তার বাগদত্তাকে বলে, “দেখো আমার পরিবার মাফিয়া, অপরাধ করে বেড়ায়। আমি ওদের মতো না।” কিন্তু শেষে আমরা দেখতে পাই একে একে পরিবারের সবাইকে হারিয়ে নানা পরিস্থিতির জটিলতায় ধাপে ধাপে সিস্টেমের মধ্য দিয়েই মাইকেল সবচেয়ে বড় মাফিয়া সম্রাট হয়ে দাঁড়ায়। সিস্টেম খুব সুন্দর ভাবে আমাদের পরিবর্তন করে ফেলে। একসময় আমরা যা ভয় পেতাম একদিন আমরা ঠিক তাই হয়ে উঠি। 

ব্যাপারটা এমন না যে আমাদের শাসকগোষ্ঠীই কেবল কাফকায়েস্কের জন্য দায়ী। সিস্টেমটাই এমন। একদম শুরুর গল্প দ্যা ট্রায়ালেও এমনটা দেখা যায়, আমাদের সিস্টেম যেভাবে চলে সেটা অপ্রতিরোধ্য। এমনকি সিস্টেমের সবচেয়ে ক্ষমতাধর মানুষটাও এই সিস্টেমের গতিটা থামাতে পারে না। এই সিস্টেম আসলে আমাদের ন্যায় বিচার নিশ্চিত করেনা। এই সিস্টেমের একমাত্র কাজ হচ্ছে চিরস্থায়ী হওয়া। এটাকে একধরনের অত্যাচার বলা যায় যেখানে কোনো অত্যাচারী নাই। আমরা আসলে কাফকায়েস্ক নামক এমন এক সিস্টেমের উপর ভরসা করি যেটা আমাদের জীবনের প্রতি ক্ষেত্রের সাথে সম্পৃক্ত। এই সিস্টেমে প্রতিনিয়ত আমাদের বিচার হয় যেই সিস্টেম কোন নিয়ম-নীতি মেনে চলে তার কিছুই আমরা জানি না।

 

মোস্তফা খালেদ অভি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থ এবং জ্যোতির্পদার্থবিদ্যা বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্র

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles