বগুড়ার ফুলবাজার।
মাসুম হোসেন –
ফুল ভালোবাসে না এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া মুশকিল! বিশেষ কোনো দিনে অথবা উৎসবে চিরন্তন উপহার ফুল। যা কখনোই কারও অপছন্দ হবে না। মনের কথা বলতে ফুলের জুড়ি নেই। ফুল আর ভালোবাসা যেন একই সুতোয় গাঁথা। যেকোনো উৎসব-অনুষ্ঠানে ফুলের বিকল্প অন্য কিছুই নেই।
তবে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে লাল গোলাপকেই বেশি প্রাধান্য দেওয়া হয়। মানুষের ভালোবাসার গভীর অংশটিকে বোঝাতে সাহায্য করে এই ফুল। ভালোবাসা দিবস ও বিশেষ দিনগুলোতে থাকে লাল গোলাপের আধিপত্য! গোলাপের পাপড়ি যেন প্রেমিক-প্রেমিকার মনের আয়না!
বগুড়া শহরের সাতমাথা এলাকায় শহীদ খোকন পৌর শিশু উদ্যানের ধার ঘেঁষে রয়েছে ছোট্ট একটি ফুলবাজার। সেখানে বছরের চার কোটি টাকার ফুল কেনাবেচা হয়। রং বেরঙের সুগন্ধি ফুলের সমাহার ওই বাজারে। প্রতিদিন সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত সেখানে থাকে নানা শ্রেণি পেশার মানুষের আনাগোনা। এটিই জেলার একমাত্র জায়গা যেখানে প্রতিদিনই বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি হয়। যেকোনো উৎসবে জেলার বাসিন্দাদের একমাত্র ভরসা এই ফুলবাজার। প্রায় ১৮ বছর আগে সেখানে ফুলবাজার গড়ে ওঠে। এর আগে, শহীদ খোকন পৌর শিশু উদ্যানের সামনে ফুটপাতে বসে ফুল বিক্রি করতেন ব্যবসায়ীরা।
ফুল ব্যবসায়ীরা বলছেন, বগুড়ার এই ফুলবাজারে ১৭টি দোকান রয়েছে। প্রতিটি দোকানে দিনে গড়ে পাঁচ হাজার টাকার ফুল বিক্রি হয়। তবে আর্থিক এই হিসাব বিশেষ কিছু দিন বাদ দিয়ে করা হয়েছে। কারণ বিশেষ কিছু দিনে অনেক দোকানে সর্বোচ্চ দেড় লাখ টাকার ফুল বেচাকেনা হয়। বগুড়ার পাশপাশি ঢাকা, যশোরের কালিগঞ্জ, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর থেকে তারা ফুল সংগ্রহ করেন। এমনকি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে ভারত থেকেও ফুল আমদানি করা হয়। বাজারটি বগুড়ায় ফুলপট্টি নামেও পরিচিত। যেকোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানে বাড়ি, হোটেল, রিসোর্ট পূজা মণ্ডপ, মন্দির, সাজাতেও এখান থেকেই ফুল কেনেন জেলার বাসিন্দারা। এছাড়াও ফুলের পাপড়ি আর রঙ তুলি দিয়ে আলপনা, বিভিন্ন স্টেজ, বুর্কেট, ঝুড়ি সাজিয়ে দেওয়া হয়। কাউকে শুভেচ্ছা জানানোর জন্য ফুলের তোড়াও তৈরী করে দেন তারা।
এই ফুলবাজারে হলুদ গাঁদা, রজনীগন্ধা, জারবেরা, চন্দ্রমল্লিকা, লাল, সাদা ও থাই গোলাপ, বেলি, কামিনী, সূর্যমুখী, ডালিয়া, টিউলিপ, লিলি, অর্কিটসহ আরও অনেক প্রজাতির ফুল বিক্রি হয়। এই বাজারের অনেক ফুল ভারত থেকে আমদানি করা হয়। আর জারবেরা ফুল আগে জেলার বাহির থেকে নিয়ে আসতেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এখন বগুড়াতেই জারবেরার চাষ হচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
ফুল ব্যবসায়ী রমজান আলী ও কাজল দাস বলেন, বছর জুড়েই কমবেশি ফুলের চাহিদা থাকে। যেকোনো বিশেষ দিনে তাদের বেচাকেনা ভালো হয়। অনেক প্রজাতির ফুলই রয়েছে তাদের কাছে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ফুলের তৈরী নানা জিনিসও তারা বিক্রি করেন।
বগুড়া শহরের মালতিনগর পাইকারপাড়া এলাকার বাসিন্দা রুহুল আমিন রাজু বলেন, বসন্তবরণ ও ভালোবাসা দিবসে ফুলের চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। ওই সময় ফুলবাজারে গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে ফুল কিনতে হয়। একই অবস্থা হয় জাতীয় দিবসগুলোতেও। তবে ফুলের চাহিদা বাড়তেই দামও বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। এমনকি ভালোবাসা দিবসে একটি গোলপ বিক্রি হয় ৫০-৭০ টাকা দামেও! যা উৎসবের দিন ছাড়া ৫-১৫ টাকায় বিক্রি হয়।
বগুড়া ফুল ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও করতোয়া ফুলঘরের মালিক লক্ষণ দাস অমিত বলেন, ‘অনুষ্ঠান ও উৎসব উপলক্ষে সারা বছরই ফুলের কেনাবেচা হয়। সপ্তাহে তিনদিন (বুধবার, বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার) ফুল বিক্রি বেশি হয়। তবে বিশেষ দিনগুলোতে (জাতীয় উৎসবসহ) অনেক দোকানে দেড় লাখ টাকার ফুল বিক্রি হয়। সবমিলে ফুলের এই বাজারে বছরে চার কোটি টাকার ফুল বেচাকেনা হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন জেলার পাশাপাশি ভারত থেকেও ফুল আমদানি করা হয়। আমি নিজেও ভারত থেকে ফুল নিয়ে আসি। এছাড়াও গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী ফুল সরবরাহ করি আমরা।’