একজন গ্রাহক চাঁদরাইড থেকে মোটরসাইকেল ভাড়া নিচ্ছেন। ছবি: সংগৃহীত-
নওশিন ইয়াসমিন-
নানান কাজে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে রাজধানীতে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষ। পথে নেমেই যানজট, গণপরিবহনের ঝক্কি, ব্যক্তিগত গাড়ি না থাকা, দ্রুততম সময়ে গন্তব্যে পৌছার তাড়া সবারই থাকে। মোটর সাইকেল এক্ষেত্রে অনেকেরই পছন্দ। ‘’চাঁদ রাইড’’ মোটর সাইকেল ভাড়া দেবার নতুন ভাবনা নিয়ে পথ চলতে শুরু করেছে চলতি বছর মে মাস থেকে। দেশে মোটর সাইকেল ভাড়া দেবার প্রতিষ্ঠান এটাই প্রথম। ড্রাইভিং লাইসেন্স আছে এমন যে কেউ ঘন্টা, দিন এমনকি মাসোহারা ভিত্তিতে মোটর সাইকেল ও স্কুটি ভাড়া নিতে পারেন এই প্রতিষ্ঠান থেকে। প্রতি ঘন্টায় বাইক ভাড়া নিলে গুনতে হবে ৫৮ টাকা। থেকে।প্রতি ঘন্টায় বাইক ভাড়া নিলে গুনতে হবে ৫৮ টাকা। মাসিক ভিত্তিতে ভাড়া নিলে মোটর সাইকেল ভেদে খরচ পড়বে ৪৮০০-৭৬০০ টাকা। আর বাৎসরিক ভিত্তিতে নিলে খরচ আসবে ২৮০০০-৩৮০০০ টাকা।
৪ বন্ধু নাঈম হোসেইন মাহতাব,সৌমিত্র বড়ুয়া,মাকসুদুর রহমান ফারুকী ও বোরহান উদ্দীন চৌধুরী মিলে গড়ে তোলেন প্রতিষ্ঠানটি। তাঁদের মধ্যে নাঈম ও সৌমিত্র স্কুল বন্ধু। বাকি দুজন একই বছর এসএসসি ও এইচএসসি পাশ করা (২০০২-২০০৪) ফেসবুকভিত্তিক গ্রুপ থেকে পাওয়া বন্ধু। পেশাগত জীবনে ৪ বন্ধু ভিন্ন পেশার হলেও চাঁদ রাইডের মাধ্যমে তাঁরা হয়ে উঠেছেন ব্যবসায় অংশীদার।
শুরুর কথা জানতে চেয়েছিলাম চাঁদ রাইডের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও নাঈম হোসেইন মাহতাবের কাছে। গল্পে গল্পে উঠে এলো সেসব কথা। ২০১৮/১৯ সালের দিকে একটি বিদেশি কোম্পানীর কান্ট্রি ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন নাঈম। কাজের প্রয়োজনে নিজে ও বিদেশি অভ্যাগতদের নিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় গিয়ে যানবাহন সংকটে ভোগেন। রেন্ট এ কার থেকে ভাড়া নিতে চাইলে প্রতিদিন তেল খরচ ছাড়াই প্রায় ৪ হাজার টাকার মত লাগতো। মাসোহারা নিতে গেলে খরচ অনেক বেশি হয়,বলাই বাহুল্য। কয়েক মাসের ভাড়ার টাকা জমিয়ে অনায়াসেই অন্য কারো ব্যবহার করা গাড়ি কিনে ফেলা যায়। গাড়ি ভাড়া নিলেও সব জায়গায় গাড়ি যাবার ব্যবস্থা থাকেও না। এই সমস্যা থেকে উদ্ধার পেতে তিনি অনেক জেলার বাইক বিক্রির প্রতিষ্ঠানে কথা বলেছেন। মোটর সাইকেলের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে ভাড়া নিতে চাইলে খোঁজ নিয়ে দেখেন কোন প্রতিষ্ঠান বিক্রি ছাড়া কোন যানবাহন ভাড়া দিতে চায়না। আবার রেন্ট এ কারের কিছু প্রতিষ্ঠান তিনি যেভাবে চাইছেন সেভাবে ভাড়া দিতে রাজি হননা। এমন সমস্যা থেকে সমাধানের ভাবনা থেকেই আসলে চাঁদ রাইড গড়ে তোলার ভাবনা মাথায় আসে। তারপর বাকি ৩ বন্ধুর সাথে আলোচনা করলে এগিয়ে আসেন তারাও। করোনাকালীন সময়ে চাঁদ রাইডের অ্যাপস তৈরি, বাইক ট্রাকিংসহ সব কাজ গুছিয়ে ২০ টি মোটর সাইকেল নিয়ে যাত্রা শুরু করলেও এখন তাদের প্রতিষ্ঠানে ৩০টি বাইক ও স্কুটি ভাড়ায় চলাচল করছে নিয়মিত। প্রতিষ্ঠানটিতে বর্তমানে কর্মরত আছেন ১৫ জন কর্মকর্তা।
নিজে চালানোর অভিজ্ঞতা থাকলে নারী-পুরুষ যে কেউ ভাড়া নিতে পারেন বাইক। চাঁদ রাইড থেকে বাইক ভাড়া নিতে চাইলে ব্যক্তির নাম ও ছবি, এনআইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্সের ফটোকপি, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, মোবাইল নাম্বার, গ্যারেন্টরের এনআইডি ফটোকপি ছবি এবং মোবাইল নাম্বার (গ্যারেন্টর হতে পারেন ব্যক্তির আত্নীয়, বন্ধু, পরিজন যে কেউ)। প্রতিটি বাইকের নিরাপত্তার জন্য বাইক ইন্সুরেন্স করা আছে। পাশাপাশি যারা চালাবেন তাদের জন্যও এক্সিডেন্টাল ইন্সুরেন্সের ব্যবস্থা থাকছে।
অ্যাপস ব্যবহার করতে চাইলে প্রথমেই চাঁদ রাইড এ্যাপটি গুগল প্লে স্টোর অথবা এ্যাপ স্টোর থেকে ইনস্টল করে এ্যাপটি ওপেন করে নিজের নাম, মোবাইল নাম্বার, পাসওয়ার্ডসহ প্রয়োজনীয় তথ্যাদি এবং ওটিপি (one time password) বসিয়ে সাইন আপ করে সাইন ইন পেজে গিয়ে মোবাইল নাম্বার ও পাসওয়ার্ড দিয়ে টি ব্যবহার করতে হবে। কিন্তু সফলভাবে বাইক বুকিং দেওয়ার জন্য এডমিন দ্বারা প্রোফাইলটি ভেরিফাইড হওয়া প্রয়োজন। প্রোফাইলটি এডমিন দ্বারা ভেরিফাই করার জন্য হোম পেজ থেকে মাই প্রোফাইল অপশনে ক্লিক করে প্রয়োজনীয় তথ্য প্রদান করে প্রোফাইল আপডেট করে এডমিন ভেরিফাই এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে কিছু সময়। এডমিন দ্বারা ভেরিফাই হওয়ার পর গ্রাহক গাড়ি বুকিং এর জন্য পুরোপুরি তৈরি।
https://chaadride.com ওয়েবসাইডে গিয়ে জানা যাবে তাদের কার্যক্রম সম্পর্কে। ফেসবুকেও আছে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবসায়ীক পেজ। https://bit.ly/3PXRa3Y তে ক্লিক করে প্লে স্টোর থেকে আর https://apple.co/3aAJrZD তে ক্লিক করলে মিলবে এ্যাপ স্টোরের ঠিকানা। সে তো গেল অনলাইনের কথা। কিন্তু রমনা এলাকার ৯১ নিউ সার্কুলার রোডের (মৌচাক মার্কেটের পাশে) মেহবাহউদ্দিন প্লাজার ১০ম তলার ১০/সি ফ্ল্যাটে রয়েছে তাদের অফিস। আর বাইক রাখার জন্য ভাড়া নেয়া আছে দুইটি গ্যারেজ বা হাব। গ্রাহকদের মূলত অফিস থেকেই বাইক সংগ্রহ করার নিয়ম কিন্তু যদি কোন গ্রাহক তাঁর পছন্দের গন্তব্য থেকে বাইকটি নিতে চান, প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা পৌছে দিবেন বাইক তবে সেক্ষেত্রে গুনতে হবে বাড়তি ৩০০ টাকা।
প্রতিষ্ঠানটির কাস্টমার রিলেশনশিপ ম্যানেজার ফারুক আহমেদ বলেন, ‘’এখন পর্যন্ত আমাদের অভিজ্ঞতা খুব ভালো। ৬ মাসে কোন দূর্ঘটনা ঘটেনি কোন গ্রাহকের দ্বারা। আর সবসময় ট্রাকিং করার কারণে বাইক হারানোর সম্ভাবনা নাই। প্রয়োজন শেষে যখন গ্রাহক হাসিমুখে চাবিসহ বাইক ফেরত দেন, বিষয়টা দারুন প্রশান্তির।‘’
চাঁদ রাইড থেকে বাইক ভাড়া নিয়েছেন এমন একজন মিজ়ান কবির। তিনি জানান, ভাড়ায় বাইক পাওয়া এক দারুন ব্যাপার। এতে সময় সাশ্রয়ী, সাথে ব্যক্তিগত স্বাধীনতা থাকে। আর ভাড়াটাও যথেষ্ট সাশ্রয়ী। আর তার থেকে বড় কথা, এক এক দিন এক এক মডেলের বাইক নিয়ে বের হতে পারি,ভালোই লাগে।
‘’ভবিষ্যতে জেলা শহরগুলোতে এমন সার্ভিস পৌছে দিতে চান উদ্যোক্তারা। সেই সাথে চার চাকার বাহন বা প্রাইভেট কার, কৃষি মেশিনারিজ নিয়েও কাজ করার পরিকল্পনা আছে আমাদের।‘’ বলেন চাঁদ রাইডের প্রতিষ্ঠাতা নাঈম হোসেইন মাহতাব।