নওশিন ইয়াসমিন –
আমাদের বছরে অন্তত একবার হলেও কোন জায়গা থেকে বেড়িয়ে আসা উচিত। মসজিদ পরিচিতির ধারাবাহিক পর্বে আজকের আয়োজনে থাকছে বাঘা মসজিদ নিয়ে কিছু কথা।
রাজশাহীর নাম শুনলেই সবার মনে প্রথম যেই কথাটি মাথায় আসবে তা হল আমের শহর। মূলত আমের জন্য বিখ্যাত রাজশাহী শহর। মুসলিম স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন ঐতিহাসিক বাঘা মসজিদ রাজশাহী জেলার বাঘা উপজেলায় ২৫৬ বিঘা জমির ওপর অবস্থিত। ১৫২৩-২৪ সালে অর্থাৎ ৯৩০ হিজরির দিকে হুসেন শাহী বংশের প্রতিষ্ঠাতা আলাউদ্দিন শাহের পুত্র সুলতান নুসরাত শাহ এই মসজিদটিকে নির্মাণ করেন।
বাংলাদেশের ৫০ টাকার নোট আর ১০ টাকার স্মারক ডাকটিকিটে দেখা যায় প্রাচীন স্থাপত্যের অন্যতম নিদর্শন বাঘা মসজিদ। ৭৫ ফুট দৈর্ঘ্য, ৪২ ফুট প্রস্থ, ২৪ ফুট ৬ ইঞ্চি উচ্চতা এবং ৭ ফুট ৩ ইঞ্চি পুরু দেয়াল নিয়ে মসজিদটি দাঁড়িয়ে আছে। মসজিদটির মূল গাঁথুনি চুন-সুরকি দিয়ে। মসজিদটিতে গম্বুজের সংখ্যা ১০টি। ভেতরে রয়েছে ৬টি স্তম্ভ। ৪টি মেহরাব রয়েছে যা অত্যন্ত কারুকার্য খচিত। এছাড়াও ৪টি মিনার এবং ৫টি দরজা রয়েছে। যার মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণ দেওয়ালের ৪ টি দরজাই বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। মাঝখানের দরজার ওপর ফার্সি ভাষায় লেখা একটি শিলালিপি রয়েছে।
মসজিদের ভেতরে উত্তর-পশ্চিম কোণে একটু উঁচুতে একটি বিশেষ নামাজ ঘর চোখে পড়বে। অনেকের মতে এটি মহিলাদের নামাজের জায়গা ছিলো। আবার অনেকেই ধারনা করেন, এই ঘরটি শুধু সুলতানের প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত শাসকের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। এছাড়া মসজিদের পূর্ব পাশে একটি বিশাল আকৃতির দিঘি আছে। প্রতিবছর শীতের সময় এ দিঘিতে অসংখ্য অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হয়ে ওঠে মসজিদজুড়ে পুরো এলাকা। মসজিদ প্রাঙ্গণের উত্তর পাশে হজরত শাহদৌলা ও তার পাঁচ সঙ্গীর মাজার রয়েছে।
মূলত ধর্মীয় ও ঐতিহাসিক কারণেই এই মসজিদটির খ্যাতি চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে। মসজিদ সংলগ্ন এলাকায় প্রতিবছর ঈদুল ফিতরের দিন থেকে ৩ দিন পর্যন্ত ‘বাঘার মেলা’র আয়োজন করা হয়। এ মেলাটি ৫০০ বছরের ঐতিহ্য। এখানে প্রতি বছর প্রচুর লোক সমাগম হয়। তার মধ্যে, সপ্তাহের প্রতি শুক্রবার হাজার হাজার মুসলমান আগমন উল্লেখযোগ্য।
বাঘা মসজিদ যেতে চাইলে ঢাকা থেকে সড়ক, রেল ও আকাশ পথে রাজশাহী যাওয়া যায়।বাসে যেতে হলে ঢাকার কল্যাণপুর ও গাবতলী থেকে দেশ ট্রাভেলস, একতা ও কেটিসি হানিফ পরিবহনের এসি বাস যায় রাজশাহীতে। ভাড়া গুনতে হবে ৮০০- ১০০০ হাজার টাকা। নন এসি বাসের মধ্যে হানিফ, শ্যামলী, বাবলু পরিবহনসহ বিভিন্ন বাস সরাসরি রাজশাহীতে যাতায়াত করে। এসব নন এসি বাসের ভাড়া লাগবে ৬০০- ৭৫০ টাকা। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে বিমান বাংলাদেশ, নভো আর ইউএস বাংলা এয়ারের বিমান চলাচল করে রাজশাহীতে। বিমানের টিকেট খরচ সর্বনিন্ম ৩৩০০- ৪২৫০ টাকা। ট্রেন ভ্রমণ করতে চাইলে ঢাকার কমলাপুর রেলওয়ে ষ্টেশন থেকে রবিবার ছাড়া সপ্তাহে ৬ দিন দুপুর ২টা ৪৫ হতে সিল্কসিটি এক্সপ্রেস এবং মঙ্গলবার ছাড়া প্রতিদিন রাত ১১ টা ১০ মিনিটে পদ্মা এক্সপ্রেস এর ট্রেন রাজশাহীর জন্য ঢাকা ত্যাগ করে। এসব ট্রেনের শ্রেণিভেদে ভাড়া পরবে শোভন চেয়ার ৩৪০- ৩৭৫ টাকা, স্নিগ্ধা ৬৫৬- ৭২৫ টাকা, এসি সিট ৭৮২- ৮৬৫ টাকা, এসি বার্থ ১২২৩ টাকা। এবার পছন্দমত যানবাহনে করে যাত্রার অপেক্ষা।