নওশিন ইয়াসমিন –
বাদাম বলতে কিছু বিশেষ গাছের বড়, শুষ্ক এবং তৈলাক্ত বীজ অথবা ফলকে বোঝায়। সারা পৃথিবীতে বিভিন্ন ধরনের বাদাম পাওয়া যায়। সব বাদামেই রয়েছে প্রচুর পুষ্টিগুণ। আকারে ছোট হলেও বাদাম বিভিন্ন খনিজ এবং পুষ্টিগুণে ভরপুর। বাদামে ভিটামিন, খনিজ, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট এবং প্রোটিনের দেখা পাওয়া যায়। বাদাম বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে, যেমন- কাঠবাদাম, কাজু বাদাম, চিনা বাদাম, আখরোট, পেস্তা ইত্যাদি। মজার ব্যাপার, নারিকেলও এক ধরনের বাদাম। প্রায় সব ধরনের বাদামই আমাদের স্বাস্থ্য, ত্বক ও চুলের জন্য খুবই উপকারী।
নিয়মিত বাদাম খাবার উপকারিতাঃ
বাদাম খাওয়ার পর ক্ষুধা অনেকটা কমে যায়। ফলে মাত্রাতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা হ্রাস পায়। নিয়মিত বাদাম খেলে হাড় শক্ত থাকে। বাদাম খেলে শরীরের জন্য উপকারী কোলেস্টেরল পাওয়া যায়। এতে থাকা প্রাকৃতিক তেল ত্বককে সতেজ রাখতে সাহায্য করে। বাদামে উপস্থিত অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ক্যানসার প্রতিরোধ করার পাশাপাশি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার উন্নতি ঘটায়। ফলে নানা ধরনের সংক্রমণকে দূরে রাখতেও সাহায্য করে। এতে ফাইবার থাকায় হজমের গণ্ডগোল দূর করে। বাদাম খেলে হৃদপিণ্ড সক্রিয় থাকে। নিয়মিত বাদাম খেলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। স্মৃতিশক্তি বাড়াতে এটি দারুণ কাজ করে। এমনকি রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। দাঁতের ক্ষয় প্রতিরোধেও এর ভূমিকা রয়েছে ।
আখরোট
আখরোটে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট এবং ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড। যা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী। এর মধ্যে অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বৈশিষ্ট রয়েছে যা আমাদের ত্বকের আর্দ্রতা সঠিক মাত্রায় বজায় রাখতে সাহায্য করে।
চিনা বাদাম
আমাদের কাছে অতি পরিচিত এবং পছন্দের একটি খাবার চিনা বাদাম। পার্কে বসে চিনাবাদাম চিবিয়ে খাননি, এমন মানুষ খুব কম পাওয়া যাবে। এতে অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট, খনিজ ও ভিটামিন সঠিক মাত্রায় থাকায় কার্ডিওভাসকুলার, কোলেস্টেরল এমনকি ক্যান্সারের মতন কঠিন রোগ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। শীতের মৌসুমে অনেকেই পাউরুটির সঙ্গে পিনাট বাটার দিয়ে খেতে ভালবাসেন, যা এই চিনা বাদাম থেকেই তৈরি করা হয়।
পেস্তা বাদাম
পেস্তা বাদাম খেতে খুব সুস্বাদু। অন্যান্য বাদামের তুলনায় দাম একটু বেশি হলেও এর পুষ্টিগুণ অনেক। পায়েস, অথবা কোনও মিষ্টির ওপরে গার্নিশ করতে পেস্তা প্রায় ব্যবহার হয়। এটি ওজন হ্রাস, রক্তচাপ, রক্তে শর্করার পরিমাণ ও কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে।
কাঠ বাদাম
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ই, এ, বি-১, বি ৬, ম্যাগনেসিয়াম এবং পটাসিয়ামে ভরপুর কাঠ বাদাম আমাদের চুল ও ত্বক দুইটার জন্যই ভালো। ওজন নিয়ন্ত্রণ ও এনার্জি বাড়াতে কাজ করে কাঠ বাদাম। নিয়মিত সেবন করলে স্তন ক্যান্সার, প্রোস্টেট ক্যান্সার, মলদ্বার ক্যান্সার এবং কোলনের ক্যান্সার সহ বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
কাজু বাদাম
কাজু বাদামে এত পরিমাণে প্রোটিন পাওয়া যায়, যা প্রায় রান্না করা মাংশ থেকে পাওয়া প্রোটিনের সমান। হাড়ের জন্য অনেক উপকারী হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি ওজন কমাতে, হার্টকে ভালো রাখতে এবং ডায়বেটিস রোগের উপকারেও সহায়তা করে কাজু বাদাম। স্ট্রোক ও হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে উপকারী। যাঁরা ওজন কমাতে চান, তাঁরা প্রোটিন চর্বি ও জাতীয় খাবার বাদ দিয়ে কাজু বাদাম খেতে পারেন। এই বাদামে কোনো কোলস্টেরল বা ক্ষতিকর উপাদান নেই। কাজু বাদামে স্বাস্থ্যকর ওমেগা-৩ এবং ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। যা মানবদেহে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের (এলডিএল) পরিমাণ কমিয়ে দেয় ও ভালো কোলেস্টেরলের (এইচডিএল) পরিমাণ বাড়িয়ে তোলে। রক্তে কপারের অভাব হলে লৌহ স্বল্পতাও দেখা দিতে পারে, যা রক্তশূন্যতা সৃষ্টি করে,এই বাদাম খেলে রক্তস্বল্পতাও দূর হয়।
তাই পরিবারের সবাই প্রতিদিন বাদাম খাবার সু-অভ্যাস গড়ে তুলুন।
great