back to top
-0.3 C
New York
Thursday, December 26, 2024

TMN Shop

spot_imgspot_img

ভাঙা হচ্ছে খুলনার আলোচিত এরশাদ শিকদারের ‘স্বর্ণকমল’

‘স্বর্ণকমল’।

রাশিদুল ইসলাম-

এক সময় যার নাম শুনে যে কেউ আঁতকে উঠতেন। শরীরের ভয়ের অনুভূতি তৈরি হতো, সে ইতিহাস এখন অনেকটাই পুরনো। কিন্তু এই মানুষটিকে ঘিরে রহস্য যেন শেষ হয় না। এখনো বিচিত্র কথা ভেসে বেড়ায়। তাঁর নাম এরশাদ শিকদার ওরফে রাঙ্গা চোরা। ২০০৪ সালের ১০ই মে খুলনা জেলা কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি জীবনের পরিসমাপ্তি ঘটে। কিন্তু তাঁর নিজের হাতে নির্মিত খুলনা মহানগরীর মজিদ সরণীর সুরম্য অট্টালিকা  ‘স্বর্ণকমল’ ঘিরে ছিল নানা রহস্য। প্রায় দু’দশক পরও দূর-দূরান্ত থেকে সেখানে ছুটে আসতো মানুষ। এটি ছিল এরশাদ শিকদারের বাসভবন। এই ভবণ নির্মাণ, স্থাপত্যশৈলী, ভবন অভ্যন্তরে ব্যবহৃত সরঞ্জাম নিয়েও ছিল অন্তমধুর আলোচনা। এবার হয়তো সেই অধ্যায়ের যবনিকা ঘটবে। ভাঙা পড়ছে রহস্যঘেরা ‘স্বর্ণকমল’।

এরশাদ শিকদার

খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গার মজিদ সরণিতে দাঁড়িয়ে ছিল এরশাদ শিকদারের বিলাসবহুল বাড়ি ‘স্বর্ণকমল।’ এরশাদ শিকদারের বহু অপকর্মের সাক্ষী এই ‘স্বর্ণকমল।’ বাড়িটিতে গোপন কুঠুরি  এবং অস্ত্র ভাণ্ডারের কথাও শোনা যায়। 

শোনা যায়, ওই বাড়িটির বিভিন্ন গোপন স্থানে নগদ কয়েক কোটি টাকা লুকানো ছিল। প্রায়ই জলসা বসতো বাড়িটিতে। শহরের নামী-দামী ব্যক্তিরা যেতেন সেখানে। এক সময় সাধারণ মানুষের খুব আগ্রহের একটি জায়গা ছিল ‘স্বর্ণকমল’। আলোচনা-সমালোচনার কেন্দ্রবিন্দু ছিল ওই বাড়িটি। বিশেষ করে ২০০৪ সালের ১০ই মে খুলনা জেলা কারাগারে এরশাদ শিকদারের ফাঁসি কার্যকর করার পর জৌলুশ হারানো বাড়িটি ছিল রহস্যে ঘেরা।

কথিত আছে, বাড়িটি বানানোর সময় এরশাদ শিকদারের হাতে খুন হন নির্মাতা। বাড়ি নির্মাণের গোপন বিষয়গুলো যাতে কেউ জানতে না পারে এ জন্য তাঁকে হত্যা করা হয়। আবার কেউ কেউ বলে থাকেন, এ বাড়িটি নির্মাণের সময় কিছু অংশ অন্যের জমিতে ঢুকে যাওয়ায় নির্মাতাকে খুন করে এরশাদ শিকদার। এরশাদ শিকদার যখন জীবিত ছিলেন তখন অবৈধ উপায়ে হাজার হাজার কোটি টাকা অর্জন করেছিলেন। 

বাড়ির সামনে নামফলকটিও খুলে ফেলা হয়েছিল অনেক দিন আগে। ১৮ বছর আগের সেই জৌলুশ না থাকলেও এখনও  মানুষ ভবনটি দেখতে আসতো। কিন্তু সেই  ভবনের একাংশ ভেঙে ফেলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে  এরশাদ শিকদারের ছেলেরা। সেই সিদ্ধান্তের পর বাড়িটির ভিতরে ভাঙার কাজ শুরু হয়।

কর্মরত শ্রমিক রহমান,  আজিজুলসহ অন্যরা জানান, স্বর্ণ কমলের অর্ধেক ভেঙে ফেলা হচ্ছে। জমির মালিকরা সেখানে বহুতল ভবন করবেন। এ কারণেই গত কয়েকদিন ধরে ভাঙার কাজ চলছে।

এরশাদ শিকদারের মেঝো ছেলে কামাল শিকদার জানান, কেডিএ’র ১০ কাঠা জমির ওপর তাদের একটি পুরাতন তিনতলা এবং আরেকটি দুইতলা বাড়ি ছিল। তারা কয়েকদিন আগে পুরাতন তিনতলা ভবনটি শ্রমিক দিয়ে ভেঙে ফেলেছেন। এখন দুইতলা ভবনটির অর্ধেকের মতো অংশ ভাঙা হচ্ছে। ভেঙে ফেলা ৫ কাঠা জমির ওপর ১০ তলা ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে।

এরশাদ শিকদার কর্মকান্ড প্রকাশ হতে থাকলে তিনি সিরিয়াল কিলার হিসেবে পরিচিতি পান। প্রায় ৬০টিরও বেশি খুনের অভিযোগ ছিল তার বিরুদ্ধে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের পর দুধ দিয়ে গোসল করতেন তিনি ও তার সহযোগীরা। অসংখ্য নারী ধর্ষণ, একাধিক বিয়েসহ এমন কোনো অপকর্ম নেই যা এরশাদ শিকদার তার জীবদ্দশায় করেননি।

এরশাদ শিকদারের জন্ম ঝালকাঠির নলছিটি উপজেলার মাদারঘোনা গ্রামে। তার বাবার নাম বন্দে আলী শিকদার। ৮ ভাই বোনের মধ্যে এরশাদ শিকদার ছিল দ্বিতীয়। ১৯৬৭ সালে জন্মস্থান নলছিটি থেকে খুলনায় চলে যান এরশাদ শিকদার। কিছুদিন পর রেলস্টেশনের কুলির সহযোগী হিসেবে কাজ করেন। সেখান থেকেই ধীরে ধীরে রেললাইনের পাত চুরি করে বিক্রি করতো এমন দলে যোগ দেন। পরে তাদের নিয়ে একটি দল গঠন করেন এবং এলাকায় ‘রাঙ্গা চোরা’ নামে পরিচিতি পান শিকদার। মাত্র ১০ বছরের মধ্যেই ১৯৭৬ সালে এরশাদ শিকদার রামদা বাহিনী নামে একটি দল গঠন করেন। যারা খুলনা রেলস্টেশন ও ৪ নম্বর ঘাট এলাকায় চুরি-ডাকাতি এবং বিভিন্ন সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িয়ে পড়ে। এই রামদা বাহিনী নিয়েই এরশাদ শিকদার ১৯৮২ সালে ৪ ও ৫ নম্বর ঘাট এলাকা দখল করেন এবং একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেন।

১৯৮২ সালে সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ ক্ষমতায় আসার পর জাতীয় পার্টিতে যোগদানের মাধ্যমে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। ১৯৮৮ সালে ওয়ার্ড কমিশনার নির্বাচিত হন। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠনের পর এরশাদ শিকদার বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের ২৬ ডিসেম্বর দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন। কিন্তু সমালোচনার মুখে কিছুদিন পরই আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত হন।

১৯৯৯ সালে গ্রেপ্তার হওয়ার সময় এরশাদ শিকদার ওয়ার্ড কমিশনার ছিলেন। রাজনীতিতে প্রবেশ করার পর আরও ক্ষমতাসীল  হয়ে ওঠেন। ১৯৮৪ থেকে ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত খুলনার রেলওয়ের সম্পত্তি এবং জোরপূর্বক ব্যক্তিগত সম্পত্তি দখল, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজি  ও অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকান্ডে লিপ্ত হন। ৬০টিরও বেশি হত্যাকান্ডে জড়িত ছিলেন এরশাদ শিকদার। ২৪টি হত্যাকাণ্ডের বর্ণনা দিয়ে আদালতে জবানবন্দি দেন তার বডিগার্ড নুর আলম। ২০০৪ সালের ১০ মে মধ্যরাতে খুলনার জেলা কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তার মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়।

এরশাদ শিকদার নিয়ন্ত্রিত ঘাট এলাকাগুলোতে এখন আর তার কোনো কিছুর চিহ্ন নেই। নিজ নামে প্রাইমারী স্কুলটি রয়েছে। বরফকলের মালিকানা বদলেছে। দখলকৃত অনেক জায়গা উদ্ধার করেছে রেলওয়ে। বেশ কিছু জায়গা চলে গেছে নতুন প্রভাবশালীদের দখলে। জীবিত থাকতে তার এলাকায় তিনি ছিলেন ত্রাস। এখন তিনি চিরনিদ্রায় শুয়ে আছেন খুলনার টুটপাড়া কবরস্থানে। এরশাদের দুই স্ত্রী খোদেজা বেগম ও সানজিদা নাহার শোভা। এরশাদ শিকদারের তিন ছেলে রয়েছে। তারা হলেন- মনিরুজ্জামান শিকদার জামাল, কামাল শিকদার ও হেলাল শিকদার। তারা পেশায় ব্যবসায়ী। এছাড়া সুবর্ণা ইয়াসমিন স্বাদ ও জান্নাতুল নওরিন এশা নামে এরশাদ শিকদারের দুই মেয়ে ছিল। যার মধ্যে এশা ২০২২ সালের ৩রা মার্চ আত্মহত্যা করেছে।

MD IMRAN HOSSAIN
MD IMRAN HOSSAINhttps://themetropolisnews.com/
Md. Imran Hossain, a certified SEO Fundamental, Google Analytics, and Google Ads Specialist from Bangladesh, has over five years of experience in WordPress website design, SEO, social media marketing, content creation, and YouTube SEO, with a YouTube channel with 20K subscribers.

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

3,800FansLike
300FollowersFollow
250SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles